খানাকুলের আঢ্য জমিদারবাড়িতে এক চালায় চার সখী নিয়ে বিরাজমান সরস্বতী

বনেদি বাড়ির পুজো মানেই ঐতিহাসিক কাহিনি। নানা অজানা ইতিহাস কথা বলে পুজোর দালানে। হুগলি জেলার খানাকুলের আঢ্য জমিদার বাড়ির দালানে সরস্বতীদেবীর পুজোপাঠকে ঘিরে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। এক চালার সরস্বতীকে ঘিরে আঢ্য জমিদার বাড়িতে সরস্বতী দেবী প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তার দুই পাশে জয়া বিজয়া এবং প্রভা উপপ্রভা নামে চার সখী বিরাজমান। বনেদি অভিজাত পরিবারের যেমন দূর্গা পুজো হয় দালান বাড়িতে তেমনি খানাকুলের আঢ্য জমিদার বাড়িতে সরস্বতী দেবীর আরাধনা হয়। এই এক চালার সরস্বতী পুজোর প্রাচীনত্ব প্রায় ২৫০ বছরের। ১৩৮৩ বঙ্গাধে এই প্রাচীন আঢ্য জমিদার বাড়ির পুজো প্রতিষ্ঠা করেন ঈশ্বর রামহরি আঢ্য। তারপর পাঁচ পুরুষ ধরে এই পুজো হয়ে আসছে। থামে ঘেরা জমিদার বাড়ির বিশাল ঠাকুর দালান। তাতে একচালার সরস্বতী, পরিবারের নিজস্ব আচার-রীতিনীতি মেনে জাঁকজমকের পুজো আঢ্য বনেদি বাড়ির সরস্বতী পুজোর ট্রেডমার্ক। প্রাচীন রাজ পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিলে মেয়ের সঙ্গে তাঁর দাসী ও সখীদেরও পাঠানো হত।

গিরিরাজকন্যা উমার যখন শিবের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়, তখন দেবীর সঙ্গে তাঁর অষ্টসখীও গিয়েছিলেন উমার শ্বশুরবাড়িতে। আটজনের মধ্যে জয়া ও বিজয়া ছিলেন উমার সবচেয়ে প্রিয় সখী। তাই উমা যখন বাপের বাড়ি আসেন, সঙ্গে এই দুই সখীও আসেন। কিন্তু খানাকুলের আঢ্য বাড়িতে দেবী সরস্বতীর সঙ্গে চার সখী রয়েছেন। মা উমার দুই সখী জয়া ও বিজয়ার সঙ্গে প্রভা ও উপপ্রভা পৃথিবীলোকে এসেছেন এবং পূজিত হচ্ছেন। জান গেছে, ডাকের সাজে দেবী সজ্জিত হয়েছে। জমিদার বাড়ির রীতি মেনে ১৬ রকম নৈবিদ্য নিবেদন করা হয়। চালচিত্রের উপর দেবীর কাঠামো তৈরি হয়েছে। তিনদিন ধরে এই দেবীর পুজোপাঠ চলে। দালান বাড়িতে বসে হাতেখরি হয় গ্রামের শিশুদের।

এই বিষয়ে ওই এলাকার প্রবীণ মানুষ বিশ্বনাথ মণ্ডল জানান, এই সরস্বতী পুজো বিশেষত্ব আলাদা। এই ঐতিহ্যবাহী পুজোর ঘট উত্তোলন হয় পাশের নিলাম্বর পুকুরে। এই পুকুরে স্নান করলে বৈবাহিক সম্পর্ক মা সরস্বতীর আশীর্বাদে সুখের হয় তাই খানাকুলের বিভিন্ন জায়গা থেকে যুবক যুবতীরা বিয়ের সময় স্নান করতে আসেন। এটা আঢ্য জমিদার বাড়ির পুজো। এই বিষয়ে বর্তমান প্রজন্ম জয়ন্ত আঢ্য বলেন, এটা পাঁচ পুরুষের পুজো পঞ্চমী, যষ্ঠী ও সপ্তমী তিন ধরে পুজোপাঠ হয়। যারা পুজোর ফল কাটেন এবং যিনি পুজো করেন তারা বংশ পরম্পরায় করে আসছেন। তারপর সুত কাটা হয়ে বিসর্জন।

জমিদার বাড়ির লবাত সন্দেশ দিয়ে দেবীকে পুজো দেওয়া হয়। এই পুজোর পুরোহিত ঠাকুরকে জমিদার বাড়ির পক্ষ থেকে একটা বিশালাকার মাছ দেওয়া হয়। বিজয়ার দিন একদিকে মনোহর দাস ঠাকুরের বৈষ্ণব মতে পুজো পাঠ হয় দেবীর আশীর্বাদ ধন্য নীলাম্বর পুকুরে। সবমিলিয়ে খানাকুলের এই প্রাচীন সরস্বতী পুজোয় জমিদার আঢ্য পরিবারের পাশাপাশি এলাকার মানুষও সামিল হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + three =