ছন্দে ফিরছে রিষড়ার জনজীবন, তবু কোথাও যেন আতঙ্ক মনে!

সুস্মিতা মণ্ডল

রিষড়া : দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রীপুজো, ছট, তিজ, বুদ্ধ পূর্ণিমা, ইদ সমস্ত উৎসবেই এতদিন মিলেমিশে আনন্দ করেছেন রিষড়াবাসী। কিন্তু হঠাৎ কী হল যে, রাম নবমীর শোভাযাত্রা ঘিরে এমন অশান্তি? কেন, পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, রেললাইনে বোমাবাজি, এলোপাথারি পাথর ছোড়ার মতো উন্মত্ত হিংসার পরিবেশ এই শহরে তৈরি হল, বুধবারও সেটাই ভেবে চলেছেন রিষড়ার বাসিন্দারা। বয়স্ক মানুষরাও মনে করতে পারছেন না, তাঁরাও এমন ছবি এ শহরে দেখেছেন কিনা!

রবিবার রামমবমীর শোভাযাত্রা ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত। সোমবার রাতে নতুন করে অশান্তি। সেটাও এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে উত্তরবঙ্গ সফর কাটছাঁট করে রিষড়ায় ছুটে আসতে হয় রাজ্যপাল সিভি আন¨ বোসকে। দুবৃত্তদের রেয়াত করা হবে না বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অভয়বাণীও দেন তিনি।

পুলিশ-প্রশাসন তৎপর হওয়ায় মঙ্গলবার রাতে কোনও অশান্তি হয়নি ঠিকই, তবে বুধবারও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়িয়েছে রিষড়ার অশান্ত হয়ে ওঠা এলাকার বাসি¨াদের মধ্যে। এদিন অবশ্য খুলেছে দোকানপাট। বেলা বাড়তে রিষড়ার স্টেশন রোড থেকে জিটি রোডের রাস্তা অন্যান্য দিনের মতোই সরগরম হয়ে উঠেছে। দোকানপাট, বাজার সব জায়গাতেই স্বাভাবিক ছ¨। যদিও সন্ধ্যাবাজার, চার নম্বর রেল গেট এলাকা, মৈত্রীপথে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। থমথমে ভাব, আতঙ্ক কোথাও যেন রয়ে গিয়েছে।

সন্ধ্যাবাজার, মৈত্রীপথ, ৪ নম্বর রেলগেট এলাকা, ছাইরোডের বহু পরিবারের মহিলা, বউরা শহরের বিভিন্ন ঘরে গৃহ পরিচারিকার কাজ করেন। দু’দিনের অশান্তিতে তাঁরা বের হতেই পারেননি। তবে বুধবার বেলা বাড়তে তাঁরাও কাজে বের হন।  এমনই একজন মহিলা, সন্তান, স্বামী নিয়ে থাকেন সন্ধ্যাবাজার এলাকায়। কাজে বেরিয়ে জানালেন, মন ভালো নেই। এলাকার পরিস্থিতি কেমন জিজ্ঞাসা করাতে উত্তর, দু’দিন খাওয়া হয়নি। কেন, বাজার দোকান খোলা ছিল না বলে ঘরে রসদ ছিল না! প্রশ্ন শুনেই বললেন, ‘না গো ভয়। আতঙ্ক।’ রান্না করেও সে খাবার খেতে পারেননি। গলা দিয়ে নামেনি। সব সময় ভয় এই বুঝি অশান্তি শুরু হল। রামনবমীর শোভাযাত্রার পর কি হনুমান জয়ন্তীতে অশান্তি হবে? সেই আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে এখন মনে।

রামমবমীর অশান্তির জেরে আহতদের মধ্যে একজন ছিলেন পড়শি। তাঁর রক্তাক্ত অবস্থা দেখে কার্যত ‘ট্রমা’-র শিকার আর এক গৃহ পরিচারিকা। দু’দিন ঘরে থাকার পর এদিন সাহস করে কাজে বেরিয়েছেন। এভাবে ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। তিনি জানালেন, পাড়ার ছেলেকে ওইভাবে দেখার পর থেকেই বুক কাঁপছে। ঘুমোতে পারছেন না। একটু শধ হলেই আঁতকে উঠছেন। মনে হচ্ছে আবার বোমাবাজি শুরু হল নাকি!

অথচ এই শহরে হিন্দু, মুসলমান, জৈন, বৌদ্ধ-সহ বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। মারোয়ারি থেকে বিহারি, বাঙালি, মুসলিম সকলেই এতদিন মিলেমিশে থেকেছেন। রিষড়ার মতো জায়গায় দুষ্কৃতী কার্যকলাপ হয়েছে মাঝেমধ্যেই, হয়েছে খুন খারাপি। তবে সে সব আলাদা। সাম্প্রতিক অশান্তি কখনও দেখেননি কেউ। দেখতেও চান না। সকলে চান, আগের শহর ফিরে আসুক। মিলেমিশে হোক উৎসব-আনন্দ।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 2 =