লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের উপর বিতর্কের ভাষণ শেষে ট্রেজারি বেঞ্চের দিকে উড়ন্ত চুমু ছুড়লেন রাহুল গান্ধি। যা নিয়ে শুরু হয়েছে এক প্রবল বিতর্ক। রাহুলের পরবর্তী বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। স্বাভাবিকভাবেই রাহুলের বক্তব্যের জবাব দিতে উঠে সেই প্রসঙ্গ তুলে তীব্র আক্রমণ শানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। স্মৃতির অভিযোগ, তিনি উঠে দাঁড়াতেই নাকি ফ্লাইং কিস ছোড়েন রাহুল। আর তাতেই বেজায় ক্ষুব্ধ হন বিজেপি নেত্রী। স্বাভাবিকভাবেই রাহুলের বক্তব্যের জবাব দিতে উঠে সেই প্রসঙ্গের অবতারণা করে তাঁর বক্তব্যে আগুন ঝরান স্মৃতি।
রাহুলের নাম না করে স্মৃতি বলেন, ‘আমার আগে যিনি বললেন তিনি শালীনতা লঙ্ঘন করেছেন। একজন নারীবিদ্বেষী মানুষই পারেন কোনও মহিলা সাংসদের দিকে চুমু ছুড়তে। যাতে তিনি বোঝা যায় কোন ‘খানদান’ থেকে তিনি এসেছেন। এবং তাঁর পরিবার ও দল মহিলাদের সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন।’
উল্লেখ্য, ‘এক দো গোলে মারুঙ্গা, জাদা নেহি।’-ঠিক এই ভাষাতেই বুধবার লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কে অংশ নিয়ে ভাষণ শুরু করেন রাহুল গান্ধি। বলেন, ‘প্রথমেই আমি আমাকে লোকসভার সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাব।’ রাহুলের বক্তব্যের শুরুতেই ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে হইহল্লা শুরু করে দেয় বিজেপি শিবির। পদে পদে রাহুলের ভাষণে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা চলতে থাকে। এর মধ্যেই রাহুল বলেন, ‘আপনারা ভয় পাবেন না আদানি নিয়ে আমি কিছু বলব না।’
তবে এদিন বিজেপি এবং এনডিএ-র শরিকরা রাহুলকে কিছুতেই বলতে দিতে চাইছিলেন না,কারণ রাহুলের সামগ্রিক আক্রমণ ছিল কখনও সরাসরি মোদিকে লক্ষ্য করে, কখনও পরোক্ষে। এই চিৎকার চেঁচামেচি চলতে থাকায় রাহুল বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে আপনার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন, আর ৫ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন।’ এরই পাশাপাশি মণিপুর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে রাহুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি মণিপুর গিয়েছিলাম। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজ পর্যন্ত সেখানে যাওয়ার সময় পাননি। আপনারা মণিপুরের মানুষকে হত্যা করে দেশকে হত্যা করেছেন। কারণ মণিপুর যে দেশের একটা অংশ তা মনেই করেন না প্রধানমন্ত্রী। আপনারা দেশদ্রোহী। মণিপুরে দেশকে হত্যা করা হয়েছে। আপনারা ভারতমাতার রক্ষক নন, আপনারা ভারতমাতার ঘাতক।’
এর জবাবে স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, ‘কথা বলার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে দেশের কোনও অপমান না হয়।’ তখন গলা চড়িয়ে রাহুলও বলেন, ‘আমি আমার মায়ের হত্যার কথাও বলতে পারব না। নরেন্দ্র মোদি কেবল দুজনের কথা শুনতে পান। আর কারও কথা তাঁর কানে যায় না।’ এই প্রসঙ্গ টেনেই রাহুল এদিন বলেন, ‘রাবণ দুজনের কথা শুনতে পেতেন মেঘনাদ এবং কুম্ভকর্ণের কথা। মোদিও কেবল মাত্র দুজনের কথা শোনেন। একজন অমিত শাহ, অন্যজন আদানি। লঙ্কায় হনুমানজি আগুন লাগাননি। রাবণের ঔদ্ধত্য ও অহংকারে জ্বলে খাক হয়ে গিয়েছিল লঙ্কা। এই দেশেও আগুন লাগানোর চেষ্টা চলছে’, বলেন রাহুল। এদিন রাহুল বক্তব্য রাখার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, এদিনের মতো রাহুলকে এত উত্তেজিতভাবে ভাষণ দিতে খুব কমই দেখা গিয়েছে।