ডব্লিউবিসিএসে হিন্দি-উর্দু ভাষার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদন, পূর্ব বর্ধমান: ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় হিন্দি-উর্দু ভাষা ঢোকানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ। বাঙালি বিরোধী সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিলের দাবিতে বাংলা পক্ষর পূর্ব বর্ধমান জেলা সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি করল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারে।
বিক্ষোভকারিদের অভিযোগ, ডব্লিউবিসিএস বাংলার নিজস্ব আমলা তৈরির পরীক্ষা। এই আমলারা অধিকাংশই বিডিও, কৃষি আধিকারিক, এসডিও ইত্যাদি পদে থেকে বাংলার মানুষকে পরিষেবা দেন। বাংলা ভাষার ভিত্তিতে তৈরি এই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যের ৮৬ শতাংশ মানুষ বাঙালি। বাংলা ভাষায় পরিষেবা পাওয়া প্রতিটা বাঙালির অধিকার। তাই বাংলাপক্ষ দীর্ঘ ৫ বছর ধরে লড়াই চালিয়েছে যাতে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বাংলা ভাষার পেপার বাধ্যতামূলক করে রাজ্য সরকার। বাংলা পক্ষর দাবি মেনে ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ গেজেট নোটিফিকেশন করে সরকার জানিয়ে দেয় যে, ডব্লিউবিসিএসে ৩০০ নম্বরের বাংলা পেপার বাধ্যতামূলক হচ্ছে। পাহাড়ের জন্য নেপালি অপশন হিসাবে রাখা হয়েছিল। বাংলা ছাড়া ভারতের সব রাজ্যেই সেই রাজ্যের মূল সরকারি ভাষার পেপার বাধ্যতামূলক।
কিন্তু বাংলায় হিন্দি-উর্দু অপশন কেন থাকবে? কার স্বার্থে? কাদের তোষণ, কিছু ভোটের স্বার্থে? বাঙালি কি বিহার বা উত্তরপ্রদেশে বাংলা ভাষায় রাজ্য সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে? বাঙালি তো অন্য রাজ্যে চাকরি পায় না। কিন্তু ওরা বাংলা না জেনেও হিন্দি-উর্দুতে পরীক্ষা দিয়ে বাংলায় আমলা হয়ে যাচ্ছেন ডব্লিউবিসিএস দিয়ে। নিজের মাটিতেই বাংলার ছেলেমেয়েদের বঞ্চনা কেন? বাংলায় থাকবে, চাকরি করবে, কিন্তু বাংলা শিখতে এত অনীহা কেন? দশকের পর দশক বাংলায় থেকেও উর্দু-হিন্দি ভাষিদের বাংলা না শেখার কারণ কী? বাংলা না শিখলে তাঁরা বাঙালিকে কী ভাবে পরিষেবা দেবেন? বাঙালি সহ ভূমিপুত্ররা কি বিডিও অফিসে গিয়ে হিন্দি/উর্দু বলবেন?
উল্লেখ্য, গত ১১ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করেন যে, ডব্লিউবিসিএসে বাংলা বাধ্যতামূলক থাকবে না, হিন্দি-উর্দু ঢোকানো হল। বাংলা পক্ষর অভিযোগ, ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’ এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বাঙালি আবেগ কাজে লাগিয়ে ২০২১ সালে ভোট বৈতরণি পার করেছিল তৃণমূল। কিন্তু এখন কেন বাঙালিকে বঞ্চনা? কেন হিন্দি-উর্দু তোষণ? উর্দু ভাষি ও হিন্দি ভাষিরা শহরাঞ্চলে থাকেন, বলে তাঁদের এত প্রাধান্য? বাংলা পক্ষ রাজ্য সরকারের বাঙালি তথা বাংলা বিরোধী এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দাবি করে, ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় হিন্দি-উর্দু ঢোকানো চলবে না। বাংলা বাধ্যতামূলক চাই। এই মর্মে বাংলা পক্ষ (ভারতে বাঙালির জাতীয় সংগঠন) সারা বাংলাজুড়ে লড়াইয়ের ডাক দিচ্ছে। যতদিন না পর্যন্ত সরকার বাংলা বিরোধী এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে, ততদিন এই লড়াই চলবে। বাংলাজুড়ে ßুñল ও কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং চাকরি প্রার্থীদের কাছে এই অন্যায়ের কথা তুলে ধরবে বাংলা পক্ষ। প্রতিটা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বাঙালিকে এবং যে কোনও জাতির মানুষ যারা বাংলাকে আপন মনে করে তাদের বাংলা পক্ষ এই প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =