মোদি সরকারের নবম বর্ষপূর্তিতে ৩৯৬ লোকসভায় ১ মাস ধরে নিরবিচ্ছিন্ন প্রচার কর্মসূচি

আগামী ৩০ মে মোদি সরকারের নবম বর্ষপূর্তিতে কেন্দ্রের ‘সাফল্য’ প্রচারের জন্য দেশ জুড়ে প্রচারসভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত, অর্থাৎ পরবর্তী এক মাস ধরে চলবে নিরবচ্ছিন্ন প্রচার কর্মসূচি। দেশ জুড়ে ৩৯৬টি লোকসভা আসনে জনসভায় অংশ নেবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপির জাতীয় স্তরের নেতারা। মোদি সরকারের ন’বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জনসভা ৩০ মে প্রধানমন্ত্রী মোদি স্বয়ং তাঁর সরকারের বর্ষপূর্তিতে প্রচার কর্মসূচির সূচনা করবে। এই দিন একটি সমাবেশে যোগ দেবেন তিনি। এরপর দিনও প্রচার কর্মসূচি রয়েছে তাঁর।
২০১৪ সালে কেন্দ্রের কুর্সিতে বসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। এরপর থেকে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের জন্য একের পর এক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে মোদি সরকার। গত ৯ বছরে মোদি সরকারের এই জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে সরকারের সেই সব প্রকল্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষ বিশেষ জানেন না। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সব জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই এবার নয়া উদ্যোগ মোদি সরকারের। সূত্রে খবর, ভিডিও এবং লিখিতভাবে ওই সব প্রকল্প তুলে ধরা হবে আমআদমির কাছে। গত ৯ বছরে মোদি সরকারের সাফল্যই বা কী, তাও জানানো হবে জনতা জনার্দনকে। পাশাপাশি এই প্ল্যাটফর্মেও তুলে ধরা হবে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান। বিগত বছরগুলিতে সরকার কী কী জনকল্যাণমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তাতে সাফল্যই বা কেমন তথ্য সহকারে সেগুলি জানানোর জন্য কেন্দ্রের সমস্ত মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন ওই প্ল্যাটফর্মের সিইও আকাশ ত্রিপাঠী। ভিডিও মাধ্যমেও তুলে ধরা হবে সাফল্যের খতিয়ান। এজন্য বিভিন্ন রাজ্য সরকার কিংবা ফিল্ড অফিসারের কাছ থেকে প্রকৃত উপভোক্তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছেন আকাশ। ত্রিপাঠীর চিঠিতে এও বলা হয়েছে, ভিডিও যেন হাই রেজ্যুলেশনের হয়। সাউন্ড কোয়ালিটিও যেন উন্নত মানের হয়। প্রতিটি ভিডিও হবে ১ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে। তাতে দেখানো হবে, কোন প্রকল্পে কী কী সুবিধা মেলে, যাঁরা ইতিমধ্যেই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন, তাঁদের বক্তব্যই বা কী, প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ায় যাঁরা সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, সেসবই তুলে ধরা হবে ওই ভিডিওয়। পাশাপাশি এও জানানো হয়েছে যে, দৃশ্য কিংবা লেখ্য, যে মাধ্যমেই প্রকল্পগুলি সম্পর্কে কিছু তুলে ধরা হবে, সেগুলির বাক্য যেন ছোট হয়। টেকনিক্যাল কোনও শব্দ যেন ব্যবহার না করা হয়। কঠিন শব্দও এড়িয়ে চলাই ভাল। বক্তব্য যেন সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয়। প্রচারে তুলে ধরা হবে ২০১৪র প্রাক-বিজেপি সরকারের আমলের কথা। তৎপরবর্তী সময়ে মোদি সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি কীভাবে সাধারণ মানুষের উপকারে লাগছে, সেগুলিও ফলাও করে বলা হবে। কেবল তাই নয়, দেশে-বিদেশে মোদি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প কীভাবে সমাদৃত হচ্ছে, তাও তুলে ধরা হবে প্রচার মাধ্যমে।
তবে বিজেপির তরফ থেকে এই কর্মসূচি নেওয়ায় এটা স্পষ্ট যে, এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘ধাক্কা খাওয়া ভাবমূর্তি’ মেরামতে সক্রিয় হচ্ছে বিজেপি। আর তার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে মোদি সরকারের নবম বর্ষপূর্তিকে। কারণ, ইতিমধ্যেই কর্নাটকে ভোটে বিজেপির ভরাডুবির দায় থেকে ইতিমধ্যেই তাঁকে মুক্তি দিয়েছে দল। সব দোষ চাপানো হয়েছে, বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই, রাজ্য বিজেপির সভাপতি নলিনকুমার কাতিল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পাদের ঘাড়ে। এদিকে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিধানসভা ভোট হতে যাওয়া পাঁচ রাজ্য, রাজস্থান, ছত্তিসগড়, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা এবং মিজোরামে। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায়। ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে তারা প্রধান বিরোধী দল। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের হিসাবে বিআরএস-এস শাসিত তেলঙ্গানাতেও বিজেপি অন্যতম প্রধান বিরোধীপক্ষ। ২০১৮-র বিধানসভায় সবকটিতেই হেরেছিল বিজেপি। কংগ্রেসের বিধায়ক ভাঙিয়ে ২০২০ সালে ক্ষমতা দখল করে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two − 1 =