কলকাতা: স্বাভাবিক প্রসব নাকি সিজার! কোনটা ভাল শিশুর জন্য? এ নিয়ে রয়েছে নানা মত। অনেক মহিলাই স্বাভাবিক প্রসবের কষ্ট একটু কমাতে সিজারকেই বেছে নেন। আবার চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ সিজার বা অস্ত্রোপচারকেই এগিয়ে রাখেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সিজার বা অস্ত্রোপচারের ‘টার্গেট’ থাকে, তাও শোনা যায়।
তবে এবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার কমাতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। স্বাভাবিক প্রসবের পরিবর্তে রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ক্রমবর্ধমান সিজারের প্রবনতা কমাতে অডিটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব জনস্বাস্থ্যের নিরিখে উদ্বেগজনক। কেন এত পরিমাণ সিজারের প্রয়োজন হচ্ছে তারও বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সরকারি হাসপাতালে সিজারের হার ৩৪ শতাংশ এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে তা প্রায় ৬৩ শতাংশ।
২০১৫ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, মাতৃত্বকালীন শিশুমৃত্যু হার কমানোর ক্ষেত্রে সিজারের কোনও অবদান নেই। তাহলে ১০-১৫ শতাংশের বেশি সিজারের হার কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশিকা। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের (৫) সমীক্ষা অনুযায়ী, সারা দেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের হার ১৭-২১ শতাংশ। ২০০৫ সাল থেকে দেশজুড়ে সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারির হার ১৭ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১.৫ শতাংশ। এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে সেই হার বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। অথচ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন বলছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রয়োজনই পড়ে না গর্ভবতী মায়েদের। আর যথাযথ চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া সিজার করলে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এমনকী, শিশুমৃত্যুর হারও এই কারণেই বাড়ছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাই বাংলায় সেই পরিস্থিতির বদল আনতে এই অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। পশ্চিমবঙ্গে সেই হার সর্বোচ্চ। শুধু সরকারি ক্ষেত্রে এই হার ৩৪ শতাংশ। বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তা দ্বিগুণ। আর সে জন্যই সিজার করলে কোন পরিস্থিতিতে সিজার এবার থেকে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের।
সিজারে সমস্যা কোথায়? জানা যাচ্ছে, অত্যধিক সিজার জনস্বাস্থ্যের নিরিখে ভাল নয়। তাছাড়া সিজারে শিশু মস্তিষ্কের বিকাশ ধাক্কা খেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, বাচ্চাকে যদি তার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বার করে আনা হয়, তাহলে তার ব্রেনের পূর্ণ বিকাশ ঘটে না। বিকাশের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা থাকে। নর্মাল হলে, বাচ্চাটার পুরোপুরি বিকাশ ঘটত, এক্ষেত্রে সেটি হচ্ছে না। সিজার না স্বাভাবিক প্রসব, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হলেও, এতে সমর্থন জানাচ্ছেন অনেকেই।