অগ্নিকন্যায় মুগ্ধ রিলায়েন্স কর্নধার। মুখ্যমন্ত্রীকে ‘সত্যিকারের অগ্নিকন্যা’ বলে সম্বোধন করলেন মুকেশ আম্বানি। নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা অডিটরিয়ামে তারকা খচিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সপ্তম বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুকেশ আম্বানিও। রিলায়েন্স গোষ্ঠী আগামী দিনে রাজ্যের উন্নয়নে সব রকমের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুকেশ। বাঙালির আবেগ স্পর্শ করে ধরা ধরা বাংলায় আম্বানি বলেন, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।’
তবে শুধু মুখের কথা নয়। আগামী তিন বছরে ডিজিটাল প্রযুক্তি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন মুকেশ। মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি আমাকে ডাকার পর আমি ৪৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। আমি জানাচ্ছি, আরও ২০ হাজার কোটি টাকা আমি বিনিয়োগ করছি আগামী তিন বছরের জন্য। জিও ফাইবারের মাধ্যমে বাংলার প্রতিটি প্রান্তে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে যাবে কয়েক বছরের মধ্যে।’ পরিবেশ বান্ধব বায়োগ্যাস তৈরির তিনটি প্লান্টও রাজ্যে গড়ছে রিলায়েন্স গোষ্ঠী। মুকেশ জানান, রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন কালীঘাট মন্দিরের সংস্কারের কাজ করবে। এই কাজ আমার ও নীতার খুব কাছের। কালীঘাট সংলগ্ন এলাকার সংস্কারের কাজও করা হবে।’
মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসাও শোনা গিয়েছে মুকেশ আম্বানির গলায়। তিনি বলেন,‘প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ী আপনাকে যেমন বলতেন, আপনি সত্যিই অগ্নিকন্যা। ত্যাগের আগুন আপনার স্বর্ণময় চরিত্রকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। আর এখন আপনি সোনার বাংলাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছেন।’
এর আগে ২০১৯ সালে যখন তিনি বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে এসেছিলেন, সেই সময় থেকে এখন-এই চার বছরে বাংলায় কীভাবে আমূল পরিবর্তন এসেছে, সেই কথাও তুলে ধরেন রিলায়েন্স কর্ণধার মুকেশ আম্বানি। বলেন, ‘বাংলা দ্রুত গতিতে উন্নতি করছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ আরও বেড়েছে। বাংলা আজ আরও প্রাণবন্ত, আরও উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে, আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী।’ রাজ্যের এই লম্বা লাফ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের জন্যই হয়েছে বলে মনে করছেন রিলায়েন্স কর্ণধার। মমতার দূরদর্শিতা ও লক্ষ্য স্থির রেখে বাংলাকে নেতৃত্ব দেওয়ার ফলেই এই সাফল্য এসেছে বলে মত আম্বানির। বলেন, ‘এই জন্যই বাংলার মানুষ বার বার আপনাকে বেছে নিয়েছেন, তাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য।’
শুধু রিলায়েন্স গোষ্ঠী নয় উইপ্রো- সহ নানা সংস্থা বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে। রাজ্যে উইপ্রো রাজারহাটে ৫০ একর জমিতে তাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরি করছে। ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সেটিকে উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে সংস্থার প্রধান রিশাদ প্রেমজি ঘোষণা করেন। যেখানে যুব প্রজন্মকে আধুনিক প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
শতাধী প্রাচীন সংস্থা জেকে পেপারের ভাইস চেয়ারম্যান হর্ষ পতি সিঙ্ঘানিয়া বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে রাজ্যে ফিরে আসার কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ১৪০ বছরের পুরনো জেকে গ্রুপ বাংলায় ফিরতে চলেছে। খড়গপুরের বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ডেয়ারি শিল্প গড়ে তোলার কাজ চলছে। আগামী দিনে এই প্রকল্প বড় আকার নেবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়েই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন হর্ষ পতি সিঙ্ঘানিয়া।