সবুজ টিলা আর নীল জলরাশির হাতছানি, বর্ষায় চলুন মুকুটমণিপুর

হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে।

                                       — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ঘন সবুজের মাঝে বিশাল জলাশয়। সেই জলে যদি এসে পড়ে কৃষ্ণ বর্ণ মেঘের ছায়া… যদি আচমকা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এসে আপনাকে ভিজিয়ে দেয়, তবে কেমন লাগবে?

গরম মানে যেমন দাবদাহ, বর্ষা মানেই সজীবতা। বর্ষা মানেই ঘন সবুজ চারপাশ। তাই বর্ষার দিনে বেড়াতে যাওয়ার জায়গার খোঁজ যদি চান, তাহলে অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন মাইথন, মুকুটমণিপুর বা ম্যাসাঞ্জোরের মতো কোনও ড্যাম বা জলাধার।

বঙ্গে এবার বর্ষা ঢুকছে সময়ের আগেই। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গে ঢুকে পড়েছে বর্ষা। ২-৩দিনের ছুটি ম্যানেজ করে আপনিও পাড়ি জমাতে পারেন প্রকৃতির কোলে। ভ্যাপসা গরম থাকবেই। তবে থাকবে প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যও।

এমনই একটি সুন্দর জায়গা মুকুটমণিপুর। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য একে রাঢ় বঙ্গের রানি বলা হয়। বাঁকুড়ার একেবারে দক্ষিণে কংসাবতী ও কুমারী নদী যেখানে মিলেছে সেখানেই মুকুটমণিপুর জলাধার। ঘন নীল জলের মাঝেমাঝে উঁকি দিচ্ছে অসংখ্য ডুবো পাহাড়। জলাধারের চারিদিকে রয়েছে ছোট ছোট পাহাড় আর টিলা। ইচ্ছে হলে মুকুটমনিপুর জলাধারের পাড় ধরে হেঁটে অথবা ভ্যান রিক্সায় চড়ে সোজা চলে যেতে পারেন জলাধারের গায়ে থাকা পরেশনাথ পাহাড়ে। কথিত আছে এখন থেকে হাজার বছর আগে দক্ষিণ বাঁকুড়ায় জৈন ধর্ম প্রভাব ফেললে এই পরেশনাথ পাহাড় হয়ে ওঠে জৈন তীর্থ ক্ষেত্র। পাহাড়ের গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথরের জৈন তীর্থঙ্করদের একাধিক মূর্তি সেই সাক্ষ্য এখনও বয়ে চলেছে।

হাতে একটু সময় থাকলে মুকুটমণিপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসা যায় ঝিলিমিলির জঙ্গল ও সুতান। ঘন শাল পিয়ালের জঙ্গল পেরিয়ে ঝিলিমিলি ও সুতানের রাস্তার ধারে চোখে পড়তে পারে জংলি ময়ূর, শেয়াল বা ছোটখাটো বন্য প্রানীদের চলাফেরা। এই জায়গা আপনাকে কংক্রিটের জঙ্গল থেকে নিমেষে নিয়ে যাবে আরণ্যক জীবনে।


কোথায় থাকবেন


রাত্রিবাসের জন্য মুকুটমণিপুর জলাধারের পাড়ে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি হোটেল রয়েছে। ঝিলিমিলিতেও থাকতে পারেন। সেখানে বেসরকারি হোটেলে ট্রি-হাউজ বা তাঁবুতেও রাত্রিবাসের সুযোগ রয়েছে। ঝিলিমিলির হোটেলও বুকিং করতে পারেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ।

 

কলকাতা থেকে কীভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস ও সাঁতরাগাছি থেকে রূপসী বাংলা ট্রেন ধরে বাঁকুড়া স্টেশনে নেমে গাড়ি করে মুকুটমণিপুর যাওয়া যায়। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস ধরেও সরাসরি কলকাতা থেকে মুকুটমণিপুর যাওয়া যায়। এ ছাড়া কলকাতা থেকে ট্রেন বা বাসে চড়ে দুর্গাপুর পৌঁছে সেখান থেকেও গাড়ি করে মুকুটমণিপুরে পৌঁছনো যায় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 5 =