লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার প্রথম বাংলায় এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কোচবিহারের বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক এবং আলিপুরদুয়ারের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গার সমর্থনে জনসভা করেন তিনি। তাঁর সভা উপলক্ষে কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে জনসমাগম দেখা যায়। গত মাসেই অবশ্য বাংলায় নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন মোদি। এর আগে আরামবাগ, কৃষ্ণনগর, বারাসাত এবং শিলিগুড়িতে সভা করে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সভা করেন কোচবিহারে। সাত দফার নির্বাচনের প্রথম দফাতেই কোচবিহারে ভোট রয়েছে। জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারেও ওই দফাতেই আগামী ১৯ এপ্রিল ভোটগ্রহণ। কোচবিহারে কয়েক ঘণ্টা আগেই সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাথাভাঙার গুমানির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে একাধিক ইস্যুতে মোদিকে আক্রমণ করেছেন মমতা। এরপর রাসমেলা ময়দান থেকে মোাদি সেই আক্রমণের জবাব দেন।
রাসমেলা ময়দান থেকে একাধিক বিষয়ে রাজ্যকে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী, যা নিম্নরূপ:
মমতা দিদির প্রতি কৃতজ্ঞ
ভাষণের শুরুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মোদি। বলেন, ‘আগের বার আমি এখানে যখন সভা করতে এসেছিলেন, মাঠের মাঝে মঞ্চ বানিয়ে উনি ময়দান ছোট করে দিয়েছিলেন। এ বার তেমন কিছু করেননি।’
দোতারা উপহার
কোচবিহারের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীকে দোতারা উপহার দেওয়া হয়েছে। মঞ্চে সেই বাদ্যযন্ত্র হাতে নিয়ে তিনি বাজিয়েওছেন।
নিশীথের প্রচারে মোদি
কোচবিহারের বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককেই এ বারও ওই কেন্দ্রের প্রার্থী করেছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার তাঁর সমর্থনে সভা করলেন মোদি। ২০১৯ সালে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েই টিকিট পেয়েছিলেন নিশীথ। ৫৪ হাজার ভোটে তিনি পরাজিত করেন তৃণমূল প্রার্থী পরেশচন্দ্র অধিকারীকে। ২০২১ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পর নিশীথকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা দেয় বিজেপি।
মোবাইলের আলো
কোচবিহারের সভা থেকে জনগণকে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে সমর্থন জানাতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। নিশীথ প্রামাণিক এবং মনোজ টিগ্গার জন্য ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার পাল্টা
‘বাংলায় আমরা অনেক টাকা পাঠিয়েছি। এখানকার সরকারের বাধায় অনেক কাজ আটকে গিয়েছে।’ কোচবিহারের সভা থেকে এমনটাই জানালেন মোদি। উল্লেখ্য, বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের বঞ্চনাকে এ বারের ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে অন্যতম ইস্যু করেছে তৃণমূল। কোচবিহারে সেই অভিযোগের বিরোধিতা করলেন প্রধানমন্ত্রী।
সিএএ নিয়ে মোদি
সিএএ নিয়ে বাংলার মানুষকে আশ্বস্ত করে মোদি বলেন, ‘বিজেপি সরকার সিএএ নিয়ে এসেছে। প্রতি পরিবারকে নাগরিকত্ব দেওয়া মোদির গ্যারান্টি। বাংলার প্রতি পরিবারকে বলব, তৃণমূল, বামেরা আপনাদের ভয় দেখাতে পারে। কিন্তু আপনারা ১০ বছর আমার কাজ দেখেছেন। মোদির গ্যারান্টির উপর ভরসা রাখুন।’
বাংলায় ‘লাখপতি দিদি’
বাংলার ৩ কোটি মহিলাকে ‘লাখপতি দিদি’ বানাবে মোদির সরকার। এমনটাই জানালেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা লাখপতি বানাব তিন কোটি মহিলাকে। ওঁদের ড্রোন পাইলট বানাব। এতে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পে গতি আসবে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে অন্তত সম্ভাবনা রয়েছে। বিজেপি এখানে তাই বিকাশের জন্য নিরন্তর কাজ করে চলেছে।’
তৃণমূলকে ভুগতে হবে
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে বাংলার সরকারকে আক্রমণ করলেন মোদি। তাঁর হুঁশিয়ারি, সন্দেশখালির ঘটনার জন্য দায়ী একমাত্র তৃণমূল। এর জন্য তৃণমূলকে ভুগতে হবে।
১০ বছরে যা হয়েছে, তা ট্রেলার
গত ১০ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা শুধু ‘ট্রেলার’, আরও কাজ বাকি আছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘বাংলার ৪০ লক্ষ পরিবার বাড়ি পেয়েছে। কোটি কোটি মানুষ প্রথম বার শৌচালয়, বিদ্যুৎ, জলের সংযোগ পেয়েছেন। কৃষকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি আমরা টাকা পাঠিয়েছি। কারণ এটা মোদির গ্যারান্টি ছিল। ১০ বছরে যে বিকাশ হয়েছে, তা দেশের সর্বত্র হয়েছে। ১০ বছরে যা হয়েছে, তা শুধু ‘ট্রেলার’। আরও অনেক কাজ বাকি। লোকে বলে আমার কোনও পরিবার নেই। আমার কাছে দেশই পরিবার।’
আয়ুষ্মান ভারত করতে দেয়নি তৃণমূল
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার জন্য যা উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে আসি, তৃণমূল সরকার চালু করতে দেয় না। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প এখানে চালু করতে দেয়নি মমতার সরকার। এখান থেকে কেউ কোনও কাজে বাইরের রাজ্যে গেলে চিকিৎসার খাতে ওই প্রকল্পে টাকা পেতেন মানুষ। তৃণমূল সরকার এটা করতে দেয়নি।’
‘ইন্ডিয়াকে খোঁচা’
বিরোধী জোটকে খোঁচা দিয়ে মোদি বলেন, ‘বিরোধীদের রাজনীতি শুধু অপপ্রচারের উপরেই টিকে আছে। ‘ইন্ডিয়া’ মিথ্যাচার। তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস এখানে নিজেদের মধ্যে লড়ছে। দিল্লিতে এক থালিতে খায়।’ তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতি প্রসঙ্গেও আক্রমণ করেন মোদি। বাংলার মানুষের টাকা নিয়ে তাঁরা দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘আমি বলি, ভ্রষ্টাচার হাটাও, ওরা বলে ভ্রষ্টাচার বাঁচাও। কিন্তু মোদী দুর্নীতিগ্রস্তদের সাজা দেবেই।’
‘আমাদের উদ্দেশ্য সৎ’
মোদি বলেন, ‘১০ বছরে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বার করেছে বিজেপি সরকার। আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে কারণ আমাদের উদ্দেশ্য সৎ। তাই আমরা দেশের উন্নতি করতে পেরেছি। যেখানে বাকি সকলের আশা শেষ হয়, সেখান থেকে ‘মোদি কি গ্যারান্টি’ শুরু হয়।’