মা দুর্গার আশীর্বাদেই গোঘাটের মানিক রাজার বৈভব বাড়তে থাকে

মহেশ্বর চক্রবর্তী

হুগলি জেলার প্রত্যন্ত একটি জনপদ হিসাবে আরামবাগ মহকুমার গোঘাটের হরিসভা এলাকা গড়ে ওঠে। এই জায়গাতেই গড়ে উঠেছিল মানিক রাজার রাজ প্রাসাদ। এই রাজ প্রাসাদের দালান বাড়িতে মা দুর্গার আরাধনা হত। আর ছোট গদাই ওই দালান বাড়িতে খেলা করতেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের পদধূলি ধন্য দুর্গা দালানের পুজোকে কেন্দ্র পুণ্যার্থীদের উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে সেই রাজপ্রাসাদের ভগ্নাদেশ দেখা যায়। আজ থেকে প্রায় তিনশো বছর কিংবা তারও আগেকার কথা। তখনও চারিদিকে সেই ভাবে বসত গড়ে ওঠেনি। ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল এলাকা। গ্রামের বাসিন্দা মানিকরাম বন্দ্যোপাধ্যায় তখনও রাজা উপাধি পাননি। কিন্তু মানুষের সঙ্গে তাঁর মেলামেশা, আতিথেয়তা তৈরি হওয়ায় গ্রামের মানুষজন তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। সেই মানিকরাম বর্ধমানের মহারাজার কাছ থেকে রাজা উপাধি লাভ করেছিলেন। এমনকী বর্ধমানের মহারাজা তাঁকে তাঁর সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় পেয়ে প্রচুর সম্পত্তিও দান করেন। এই রাজপ্রাসাদেই দেবী দুর্গার আরাধনার জন্য দুর্গা দালান গড়ে ওঠে। শুরু হয় দেবীর আরাধনা, যা বর্তমান প্রজন্ম নিষ্ঠার সঙ্গে করে আসছে। তবে বর্তমানে দালান বাড়ি সংস্কার করা হলেও পুজোর রীতি নীতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। তবে আট পুরুষ আগের সে সমস্ত স্মৃতিকে বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা কিছুটা নতুন করেই গড়েছেন। তবে এ মন্দিরে যে দুর্গা বন্দনা হয় তাতে শুধুমাত্র লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এই বিষয়ে মানিক রাজার পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম প্রসেনজিৎ ব্যানার্জী জানান, এখানে গোস্বামী মতে পুজো হয়। কোনও বলি হয় না। এই পরিবারে স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব আসতেন। তিনি এখানে খেলা করতেন। জানা গিয়েছে, প্রতিপদ থেকেই ঘট বসানো হয়। সেই দিন থেকেই পুজো শুরু হয়ে যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও নাকি এই মানিকরাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্গা পুজোয় আসতেন। তিনি অবশ্য তখন অনেক ছোট। সকলের আদরের গদাই। মানিক রাজার আমবাগানে খেলে বেড়াতেন।
রামকৃষ্ণদেবের স্মৃতি বিজরিত এই মানিক রাজার দুর্গাপুজো আজও মানিক রাজার বংশধরেরা সমান ভাবেই করে আসছেন। এখন যারা পুজো করে, তারা রাজার অষ্টম প্রজন্ম। কর্ম সূত্রে এই পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও পুজোর দিনগুলো সকলে এক হয়ে আনন্দটা উপভোগ করেন। পরিবারে সদস্যদের দাবি, প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগেকার কথা। তখন মানিক রাজার অর্থনৈতিক ভাবে অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন। সংসার চালাতে পুরনো কলকাতায় বেতনভোগী হিসাবে কাজও করতেন। কথিত আছে, একদিন তিনি মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। মা তাঁকে বলছেন, তুই আমাকে নিয়ে চল তোদের বাড়িতে, আমি যাব। আমাকে ওখানেই রাখবি। আমার পুজো করবি। এরপরই নাকি কাজের জায়গায় ছুটি নিয়ে গোঘাটে হরিসভায় চলে আসেন তিনি। এরপরই সমস্ত বন্দোবস্ত করে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। মায়ের আশীর্বাদে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়। সবমিলিয়ে আজও রীতি মেনে শ্রীরামকৃষ্ণের পদধূলি ধন্য মানিক রাজার বর্তমান প্রজন্ম দেবী দুর্গার আরাধনা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 2 =