জামিন পেলেন মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্য। সোমবার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। নিয়োগ মামলায় এই প্রথম জামিন হল। জামিনের নির্দেশ দেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। নিঃসন্দেহে এই নির্দেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন প্রাথমিক পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করা হলেও স্ত্রী শতরূপাকে প্রথমে গ্রেফতার করেনি ইডি। শতরূপাকে সমন পাঠানো হয়েছিল ইডির তরফে। তখন তিনি নিম্ন আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এরপরই বিচারক তাঁকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। এরপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে জামিনের আর্জি জানান শতরূপা। তখন তাঁকে জামিন না দিয়ে ফের জেল হেফাজতে পাঠানো হয় তাঁকে। প্রায় ৫ মাস ধরে শতরূপা জেলে। অথচ এই সময়ের মধ্যে শতরূপাকে নিয়ে ইডি সেভাবে কোনও পদক্ষেপ করেনি। এমনকী গ্রেফতার করতে চাই বলেও ইডি কোনও আবেদন জানায়নি। এরপর এখন কাস্টডিয়াল ট্রায়ালের কথা বলছেন তদন্তকারী সংস্থা।
এখানেই আদালতের প্রশ্ন ছিল, শতরূপা ভট্টাচার্যকে গ্রেফতারের এতদিন পর কেন হেফাজতে রেখে ট্রায়াল করতে চাইছে তা নিয়েই। এরপরই সোমবার জামিনের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ১ লক্ষ টাকার বন্ডে জামিন দেওয়া হয় শতরূপা ভট্টাচার্যকে। একইসঙ্গে পাসপোর্ট জমা রাখার নির্দেশও দেয় কোর্ট। ‘তাঁকে আর হেফাজতে রাখার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না’, মন্তব্য করেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
এদিকে এদিন আদালত জানতে চায়, ‘গ্রেফতার নয় কেন ইডির? মাত্র একবার জিজ্ঞাসাবাদ, তাও গ্রেফতারের আগে! এই মামলায় অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। ইডি নিজের ক্ষমতার প্রয়োগ করেনি। তিনি যে টাকা নিয়েছেন সেই প্রমাণ দেখাতে পারেনি ইডি। ৭ জানুয়ারি প্রথম যখন জামিনের আর্জি করেন, তখন তাঁকে জামিন দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।’ স্পেশাল কোর্টের পদ্ধতি এক্ষেত্রে খুব বিরক্তিকর’, এমনটাও এদিন মন্তব্য করতে শোনা যায় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষকে।
এদিন বিচারপতি ঘোষ এদিন জানতে চান, ‘মানিক অযোগ্যদের চাকরি দিয়েছেন। টাকার যোগসূত্র আছে তাঁর সঙ্গে। কিন্তু শতরূপা যে এই পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত সেটা কীভাবে প্রমাণিত? যদি তাই হয়, তাহলে প্রথমেই কেন গ্রেফতার করেননি? সমন পাঠানোর পর উনি যখন আত্মসমর্পণ করেন, তখন জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ইডি কেন গ্রেফতার করেনি?’
উত্তরে ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলেন, শুধু টাকার বিষয় নয়। চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করা হয়েছে। তাই কাস্টডিয়াল ট্রায়ালের আবেদন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘উনি গৃহবধূ নন। ওনার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। চিন, সাউথ আফ্রিকা, ফ্রান্স, তানজানিয়া, জাপান, ইত্যাদি দেশে ভ্রমণ করেছেন। উনি লেডি ম্যাকবেথ।’ এই প্রসঙ্গে শতরূপার আইনজীবী জিষ্ণু সাহা প্রশ্ন করেন, ‘কাস্টডিয়াল ট্রায়ালের কথা বলছে। অথচ ওনাকে এতদিনে মাত্র একবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর।’ এরই রেশ ধরে ইডিকে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘যিনি ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছেন তিনি তো জেলেই আছেন। যতবার ডেকেছেন শতরূপা গিয়েছেন। প্রশ্ন উঠবেই কেন গ্রেফতার করেননি?’ শতরূপা কীভাবে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যুক্ত, ইডি সেটা কিন্তু বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে, এমনটাই বক্তব্য বিচারপতি ঘোষের।