রামমন্দির উদ্বোধনের দিনই বাংলায় হল সংহতি মিছিল। মিছিলের পর সভা থেকে সবধর্মকে নিয়ে একসঙ্গে চলার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘হিন্দু, মুসলমান, শিখ, বৌদ্ধ আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব। দেশকে টুকরো হতে দেব না। এটাই আমাদের শপথ।’ মমতা বলেন, ভোটের আগে ধর্মে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাকেই এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন রামমন্দির উদ্বোধনের দিনেই সংহতি মিছিল ও সভার। সেই মতো এদিন সব ধর্মের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার বুকে মিছিল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে কালীঘাট মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন মমতা। এরপর মসজিদ, গুরুদ্বার যান তিনি। এর পরই ধর্মীয় ভেদাভেদ না করে সব ধর্মের মানুষকে একসঙ্গে চলার বার্তা দেন তিনি। বলেন, ‘অনুষ্ঠান শুরুর আগে নকুলেশ্বর মন্দির গেলাম, জগন্নাথ মন্দিরে গেলাম। সেখান থেকে গেলাম মা কালীর কাছে। কালীঘাটে ১৬৫ কোটি টাকা আমরা খরচ করছি। ২-৩ মাসে কাজ শেষ হয়ে যাবে। গুরুদ্বার, চার্চ ও মাজারে গিয়েও সম্মান জানিয়েছি। আমার পথে যতটা তীর্থস্থান পড়েছে আমি চেষ্টা করেছি সম্মান জানানোর। কারণ, সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের মিছিল ছিল এটা।’
রামমন্দির প্রসঙ্গে মমতা বললেন, ‘আমি রামের বিরুদ্ধ নই। রাম-সীতাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তোমরা তো কই সীতার কথা বল না! তোমরা কি নারীবিরোধী? সীতা না থাকলে রাম হয় না। আর কৌশল্যা দেবী না থাকলে, মা না থাকলে রামের জন্ম হয় না। মায়েরাই জন্ম দেয়। ১৪ বছর বনবাসে সীতাই রামের সঙ্গে ছিলেন। আবার তাঁকে নিজেকে প্রমাণ করতে অগ্নিপরীক্ষাও দিতে হয়েছিল। আমরা জানি। আমরা তাই নারীশক্তি দুর্গার পুজো করি। রামই সেই দুর্গার পুজো করেছিলেন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার আগে।’
মমতার কথায়, ‘ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে চলার জন্য বাংলার মানুষকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। তবেই দেশ বাঁচবে, সর্ব ধর্ম বাঁচবে।’ এদিন ফের বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় রাজনীতির অভিযোগ তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘মানুষ এগিয়ে না এলে ভোটের নামে একদল লোক এসে দেশ বিক্রি করে চলে যাবে। আমার লজ্জা লাগে, ১০০ দিনের টাকা দেয়নি। বাংলার মানুষকে কাজ করিয়ে টাকা দেয় না। আবাসের টাকা দেয় না। বলছে গেরুয়াকরণ করতে হবে। আমি কেন করব গেরুয়া? গেরুয়া তো ত্যাগের প্রতীক। যারা দান ধ্যান করে তারা পরে।’ এর পরই লড়াইয়ের ডাক দেন মমতা। বলেন, ‘আমরা লড়াই করব। হারব না। আগুন লাগালে সেটা নেভাবেন। সবাই একসঙ্গে থাকবেন সবাই একসঙ্গে থাকব। এটাই আমাদের শপথ।’
মমতা বললেন, ‘বেচারা নেতাজি। এত লড়াই করলেন স্বাধীনতার জন্য। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের জন্মদিনে ওদের জাতীয় ছুটির দিবস ঘোষণা করতে বলেছিলাম। বলে দিয়েছিল হবে না। আর আজ ওরা ছুটি চাইছে। ছুটি দিচ্ছে। কারণ আজ নাকি ওদের স্বাধীনতার দিন। জানি না, ওরা নতুন করে কী স্বাধীনতা পেয়েছে। ওদের কি রাজনৈতিক স্বাধীনতার দিন? যদিও স্বাধীনতা আন্দোলনে এদের কারও টিকিটিও ছিল না। আর আজ ওরা বলছে সবাইকে ছুটি দিয়েছি। বাড়িতে থাকো আর আমাদের কথা শোনো।’
রামমন্দির উদ্বোধনে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিন আগেই মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তিনি অযোধ্যা যাচ্ছেন না। এমনকী, রামমন্দির উদ্বোধনকে ‘ভোটের আগে গিমিক’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন মমতা।
‘বাবরি ভাঙার সময় একা পথে নেমেছিলাম…’
‘যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল, আমি একা পথে নেমেছিলাম। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, কোনও প্রয়োজন আছে কি না। ভয় না পেয়ে সমস্ত জায়গায় গিয়ে ত্রাণ দিয়ে এসেছিলাম। এসব অনেকে ভুলে গিয়েছে।’ মমতা বললেন, ‘জয় বাংলা, জয় সম্প্রীতি। সব ধর্ম ভাই ভাই। দেশকে ভাগ করতে দেব না। আমরা শান্তি চাই।’
ইন্ডিয়া জোটে সম্মান পাই না: মমতা
বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ আমি দিয়েছি, অথচ বৈঠকে সম্মান পাই না’ এমনই অভিযোগ করলেন মমতা। বলেন, ‘সিপিএম বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক নিয়ন্ত্রণ করে। আমি সেটা মানব না।’ মমতা বললেন, ‘একটা লড়াই শুরু হয়েছে। আর এই লড়াই চলবে। আমরা না ভয় পেয়ে লড়ব। আমরা কাপুরুষ নয়। তাই আমরা লড়ব। ’