মহেশ্বর চক্রবর্তী
প্রত্যাশা মতোই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরামবাগের প্রশাসনিক সভা থেকে উন্নয়ন নিয়ে বড় ঘোষণা করলেন। লোকসভা ভোটের আগে আরও কল্পতরু হয়ে উঠলেন মমতা। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বিরাট ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চে ঘাটালের সাংসদ দেব অধিকারীর আবেদন শুনে তিনি বলেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত করবে রাজ্য সরকার।
এদিন মমতা বলেন, ‘দেব হলেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের চ্যাম্পিয়ন। সুতরাং তোমার আবদার আমি কিন্তু রেখেছি। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা দেব আমাকে বলেছে। ইতিমধ্যেই আমি এ নিয়ে আলোচনা করে নিয়েছি। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান আমরা তৈরি করছি। এই প্ল্যানের মাধ্যমে ১৭ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। কেন্দ্রীয় সরকার ক্লিয়ারেন্স দিচ্ছে না বলে, প্রোজেক্টগুলি করা যায়নি। তবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে আরও ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা লাগবে, আমি অলরেডি বলেছি। দেব যখন আমার কাছে বলেছে, দিদি ভাইকে তো ফেরাতে পারে না। কবে দিল্লি দেবে, তারপরে হবে! দিল্লির উপর ভরসা করে বসে না থেকে, এটা যাতে আমরা ৩-৪ বছরের মধ্যে রূপায়িত করতে পারি সেই নির্দেশ দিচ্ছি।’ এছাড়াও দেবের সাংসদ এলাকায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গোল্ডহাব হবে বলে ঘোষণা করেন। এদিন আরামবাগের কালীপুর মাঠের সভায় মমতার সঙ্গে ছিলেন ঘাটালের সাংসদ অভিনেতা দেব। মমতার ঘোষণার পর দেবের মুখে চওড়া হাসি লক্ষ করা যায়। আর এ থেকেই সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে দেব যে ঘাটাল থেকে লোকসভায় লড়াই করছেন তা স্পষ্ট হয়। এদিন তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি ছাড়লেও, রাজনীতি আমাকে ছাড়বে না।’ এর পরেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
এদিন আরামবাগে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান ও প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই আমজনতার কাছে রাজ্যের জনমুখী প্রকল্পগুলির কথা তুলে ধরেন তিনি। চলতি বছরে বাজেটে নতুন যে প্রকল্পগুলির কথা ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলিও তুলে ধরেন তিনি। সারা হুগলি জেলা জুড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করেন তিনি। রাস্তা থেকে শুরু করে সেতু ও ভবন নির্মাণ রয়েছে। সিঙ্গুরে কৃষকদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মনুমেন্ট নির্মাণের কথা বলেন। এদিন সভা থেকে রাজ্যের চাকরি পরিস্থিতি নিয়ে গর্জে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১৫৫টি টিম পাঠিয়েছে কেন্দ্র। তারা গিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে সব ঠিক আছে। তারপরও বকেয়া টাকা দেয়নি।’ তিনি ঘোষণা করেন, গঙ্গাসাগরের উপর সেতু করবে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভর করে নয়। অনেকদিন অপেক্ষা করা হয়েছে। ৬টি ইকোনমি করিডর করছি। তার পাশে শিল্প তৈরি হবে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও ঘোষণা করেন, ‘চিকিৎসক সহায়ক যোগ্যশ্রীর মাধ্যমে নার্স নেওয়া হবে। এবার তৈরি হচ্ছে শিল্প।’ আরামবাগের কামারপুকুরের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। তারকেশ্বর মন্দিরে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলে তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে দেবের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার, হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া-সহ সভাধিপতি কৃষ্ণ চন্দ্র সাঁতরা, আরামবাগ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী, রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব থেকে অন্যান্য দপ্তরের আধিকারিকেরা।