আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
দেশ বাঁচাব আমরা, দেশ গড়ব আমরা। একশো দিনের কাজ,আবাস যোজনায় কিভাবে এই রাজ্যের মানুষকে বঞ্চনা করেছে কেন্দ্র সেই অভিযোগে ফের সরব হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার দুপুরে পুরুলিয়ার হুড়ার লধুড়কা শিব মন্দির গ্রাউন্ডে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতর সমর্থনে নির্বাচনী জনসভাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘১০০দিনের কাজের টাকা দেয়নি কেন্দ্র। ঝড়ে জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ারে ৫ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আচরণ বিধি লাগু থাকার কারণে সরাসরি ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়নি। আমরা তাদের বাড়ি তৈরি করে দিতে চেয়েছিলাম। ৬দিন আগে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও কমিশন অনুমতি দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোদিবাবু ৩ বছর ধরে ঘর তৈরির টাকা দেননি। বিজেপি সরকার ৩ বছর ধরে ১০০দিনের কাজের টাকা দেয়নি। আমরা ৫৯লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারদের টাকা দিয়েছি। আর মানুষ যখন প্রতিবাদ করছেন তখন এনআইকে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। গদ্দারের এলাকায় ঘুমন্ত অবস্থায় মধ্য রাতে মহিলাদের বাড়িতে ঢুকে পুলিশের ড্রেস পরে গিয়ে মহিলাদের ওপর হামলা করে অত্যাচার করা হচ্ছে। মা-বোনেরা প্রতিবাদ করায় মামলা করা হচ্ছে। ভয় দেখানো হচ্ছে। বিজেপি কর তাহলেই ছেড়ে দেওয়া হবে। কেন বিজেপি করবে তারা? বিজেপি করলেই সাদা আর তৃণমূল করলেই কালো। কি মজা।’
কেন্দ্রকে এদিন ফের একবার আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘দেশের সব নেতাকে গ্রেপ্তার কর। কোনওদিন ভারতবর্ষে এই পরিস্থিতি আপনারা দেখেছেন। একটা স্বৈরাচারি সরকার। একটা দানবীয় সরকার। একটা অত্যাচারি সরকার। সারা ভারতবর্ষে বেকারের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর মোদিবাবুর গ্যারান্টি আছে। আপনার গ্যারান্টি মানে তো নোটবন্দি। আপনার গ্যারান্টি মানে তো সিবিআই, এনআইএ। আপনার গ্যারান্টি মানে তো ইনকাম ট্যাক্স। আপনার গ্যারান্টি মানে তো গরিব মানুষের টাকা বন্ধ করা। আবার বলছেন দুর্নীতি। দুর্নীতিটা দেখেছেন কি? চ্যালেঞ্জ করছি, ১৩৬টা কমিটি বাংলায় পাঠিয়েছিলেন দুর্নীতি দেখার জন্য বিজেপির গদ্দারদের কথায়। বলছে বাংলাকে টাকা দেবে না। তদন্ত কর। তদন্ত করে কি করলেন সেটা ফাঁস করুন। উত্তরপ্রদেশেও তদন্ত করতে গিয়েছিল। রিপোর্টে ৮৫শতাংশ দুর্নীতি আছে। আর বাংলা নিয়ে বড় বড় কথা বলা হচ্ছে।’ সভায় আগত কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওদের ফাঁদে পা দেবেন না, ভোটের পর আমরাই ঘর তৈরির টাকা দেব।’
মমতা বলেন, ‘বিজেপি আগেরবারেও মিথ্যে কথা বলে গিয়েছিল পুরুলিয়ায়। ™ুরুলিয়া থেকে গত নির্বাচনে যাকে আপনারা জিতিয়েছিলেন তিনি কি করেছেন? আজ পর্যন্ত কিছু করতে পেরেছেন? ছবি লাগিয়ে রেখে দিয়েছেন। আমার ছবি সব মুছে দিয়েছি ইলেকশন নিয়ম মেনে। প্রধানমন্ত্রীর ছবি কেন থাকবে? আমি আসতে আসতে দেখলাম প্রধানমন্ত্রী কৃষক বন্ধু সেন্টার। প্রধানমন্ত্রীর ছবিটাতো মোছেনি। এটা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ-এর দায়িত্ব ছিল মোছার। কিন্তু তারা মোছেনি। আমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম।’
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এবার রামনবমী আসছে। একটা চকলেট বোম পড়লেও দেখবেন ওই এনআইএ-কে ঢুকিয়ে দেবে। কিন্তু এনআইএ-এর কোন অধিকার আছে? এখানকার পুরুলিয়াতেও আমি শুনেছি। সব হোটেলে গিয়ে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছে কোন পার্টির কে কে থাকছে। আমি বলি তোমার কি? তোমার এনআইএ-এর কি এটা কাজ? কোন কোন পার্টি কোন কোন হোটেলে থাকবে। থাকবে কি তোমার মাথায়? ইলেকশনের সময় আমরা গর্ভমেন্টের জায়গায় থাকি না। একদিকে এনআইএ অন্যদিকে সিবিআই , বিজেপির ভাই-ভাই হয়ে কাজ করছে এরা। মানুষ এবারের নির্বাচনে তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে। মা-বোনেদের গর্জন, বিজেপির হবে এবার বিসর্জন। ’
এরপরেই একদা মাওবাদী নাশকতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাম আমলের অশান্তি পেরিয়ে পুরুলিয়ায় আজ শান্তির বাতাবরণ।’ প্রকাশ্য জনসভায় বিভীষিকার সেইসব দিনগুলি না ফেরানোর বার্তা দিয়ে সরকারের একাধিক জনমুখী প্রকল্পের কথা ও জল সমস্যা দূরীকরণের জন্য জাইকা প্রকল্পের কথা তুলে ধরে ও জেলার রঘুনাথপুরে ৭৪হাজার কোটি টাকার শিল্পে বিনিয়োগ করার কথা ফের তুলে ধরে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাজুক ধামসা, বাজুক মাদল, শান্ত থাকুক জঙ্গলমহল। ধামসা- মাদলের বোলে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে এবার পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে শান্তিকে তথা শান্তিরাম মাহাতকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে গেলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।