মলদ্বীপ, লক্ষদ্বীপ বিতর্কে পর্যটক ছুটছে লক্ষদ্বীপে, কীভাবে যাবেন, খরচ কত? জেনে নিন সমস্ত তথ্য

নীল সমুদ্র, মিহি বালুতট, বিলাসবহুল ওয়াটার ভিলায় ছুটি কাটাচ্ছেন বলিউড তারকারা। ছবির মতো সুন্দর মলদ্বীপ নিয়ে এতদিন এই ছবি দেখে এসেছেন ভারতবাসী। মনে মনে স্বপ্ন বুনেছেন, যদি একবার যাওয়া যায় সে দেশে। আহা! কী রূপ!

কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে বদলে গিয়েছে সেই দৃষ্টিভঙ্গি। মলদ্বীপের বুকিং বাতিল করে ভারতবাসী এখন ভারতেরই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, সমুদ্রের বুকের ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত লক্ষদ্বীপে যাচ্ছেন।

কথায় আছে কারও সর্বনাশ তো কারও পৌষমাস। এতদিন প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা থাকা যে লক্ষদ্বীপ নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যেই উত্সাহ কম, সেই লক্ষদীপই এখনই চোখের মণি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর লক্ষদ্বীপ ভ্রমণের পর সেই ছবি পোস্ট করা ও তা নিয়ে মলদ্বীপ সরকারের তিন মন্ত্রীর ভারত ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মলদ্বীপ ছেড়ে লক্ষদ্বীপ যাচ্ছেন শয়ে শয়ে ভারতীয় পর্যটকরা।

তবে কেন এতদিনেও খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি লক্ষদ্বীপ, কী আছে সেখানে জেনে নেওয়া যাক।

লক্ষদ্বীপ ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এটি তৈরি হয়েছে ৩৬টি আলাদা আলাদা দ্বীপ নিয়ে। মোট আয়তন ৩২ বর্গ কিলোমিটার।এত দিন সেই জায়গা সম্বন্ধে সকলের কমবেশি জানা থাকলেও, বছরে খুব কম ভারতীয়েরই পা পড়ত সেখানে।মালয়ালম এবং সংস্কৃতে লক্ষদ্বীপ কথার অর্থ লক্ষ দ্বীপের সমন্বয়। এই দ্বীপপুঞ্জ পশ্চিমে আরব সাগর এবং পূর্বে লক্ষদ্বীপ সাগরের মধ্যে সামুদ্রিক সীমানা হিসেবে কাজ করে।ভারতের মালাবার উপকূল থেকে প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেই দ্বীপপুঞ্জেই এখন নজর দেশবাসীর।

কারণ, ভারত-মলদ্বীপ নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক।অপূর্ব সুন্দর লেগুন, সাদা বালির সৈকত এবং প্রচুর প্রবাল— লক্ষদ্বীপ এবং মলদ্বীপের মধ্যে মিল প্রচুর। কিন্তু তবুও বিলাসবহুল ভ্রমণের উদ্দেশে ভারতীয়দের বেশি ভিড় জমে মলদ্বীপে। ২০২১ এবং ২০২২ সালে প্রায় আড়াই-তিন লক্ষ ভারতীয় মলদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেই রীতিই পাল্টাতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। মলদ্বীপের বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে চলেছে কেন্দ্রশাসিত লক্ষদ্বীপ।লক্ষদ্বীপের পুরনো সৈকতগুলি সাদা বালি এবং স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ জলের জন্য বিখ্যাত।

কেন লক্ষদ্বীপ ছিল দূরেই!

লক্ষদ্বীপ ভারতের অংশ হলেও এই দ্বীপে যেতে বাধ্যতামূলক হল অনুমতিপত্র। অনলাইনেই তা পাওয়া যায়।অনুমতি মেলার পর এখানে যেতে হলে প্রথমে যেতে হয় কেরালার কোচি। ফোর্ট কোচিন  থেকে এমভি কাভারাত্তি নামের একটি জাহাজে যাওয়া যায়। এতে সমুদ্রম নামে প্যাকেজ আছে। অথবা কোচি থেকে বিমানে আগাত্তি যেতে হয়। লক্ষদ্বীপের দ্বীপের কোথায়, কতদিন পর্যটক থাকবেন তা সমস্ত কিছু জানিয়ে যেতে হয়।

বলা চলে, এই ধরনের নানা নিয়ম-কানুনের ঝঞ্ঝাট মনে করেই এতদিন লোকজন এই অসাধারণ সুন্দর লক্ষদ্বীপকে এড়িয়ে গিয়েছেন। এই দ্বীপের মাত্র ছটিতে ভারতীয় পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। তাও আগাম নিয়ে তবে যেতে হয়। আর বিদেশিদের যাওয়ার অনুমতি মেলে দুটি দ্বীপে।

কীভাবে আবেদন করতে হয়?

লাক্ষাদ্বীপ যাওয়ার অন্তত একমাস আগে lakshadweeptourism.com/contact.html-এ আবেদন জানাতে হবে। সেখানে জানাতে হবে নিজের নাম, ঠিকানা, লাক্ষাদ্বীপ যাওয়ার কারণ, বেড়ানোর দিনক্ষণ আর কোন কোন দ্বীপে ঘুরতে বা থাকতে চান। এই আবেদনপত্র জমা করার সময় দিতে হবে নিজের পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সাইজের ছবিও। আবেদন করার ৭ দিনের মধ্যেই অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। অনুমতিপত্রটি ৩০ দিনের জন্য কার্যকর থাকে।

 

লক্ষদ্বীপের সংস্কৃতি

লক্ষদ্বীপগুলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বহু আদিবাসী উপজাতিদের বাস। তাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার কথা মাথায় রেখেই সব দ্বীপে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না।লক্ষদ্বীপে প্রবেশের অনুমতিপত্রের ফর্ম অনলাইনে পাওয়া যায়। সেই ফর্ম জমা দিতে হয় প্রশাসনের কাছে। সেই ফর্ম খতিয়ে দেখে প্রবেশের জন্য সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়।লক্ষদ্বীপে প্রবেশের অনুমতি পাঠানো হয় ইমেল মারফত। লক্ষদ্বীপে কাভারত্তি, আগত্তি, বাঙ্গারাম, কদমত, মিনিকয়, থিন্নাকাড়া—এই দ্বীপেই ভ্রমণ করার অনুমতি রয়েছে পর্যটকদের।এর মধ্যে জলক্রীড়াপ্রেমীদের পর্যটকদের পছন্দের জায়গা আগত্তি দ্বীপ। বিভিন্ন ধরনের জলক্রীড়ার আয়োজন রয়েছে সেই দ্বীপে।মিনিকয় আবার ঐতিহ্যবাহী নৃত্য—‘লাভা’র জন্য বিখ্যাত। উৎসব-অনুষ্ঠানে সেই নৃত্য পরিবেশিত হয়।মিনিকয়ে ‘জাহাধনি’ নামে বিভিন্ন রঙিন নৌকার একটি প্রতিযোগিতা হয়। যা পর্যটকের কাছে বিশেষ আকর্ষণের। মিনিকয় দ্বীপ টুনা মাছের জন্যও বিখ্যাত। ঔপনিবেশিক ভারতে ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশরা লক্ষদ্বীপে একটি টুনা মাছ প্রক্রিয়াকরণের কারখানা তৈরি করেছিল।বাঙ্গারাম পর্যটক টানে প্রবালপ্রাচীর এবং বিভিন্ন ধরনের মাছের সম্ভারের কারণে।লক্ষদ্বীপের অধিকাংশ মানুষ মালায়লম ভাষায় কথা বলেন। মিনিকয় দ্বীপে কথা বলা হয় মাহি বা মাহল ভাষায়, যার সঙ্গে পুরনো সিংহলি ভাষার মিল রয়েছে। তবে কেউ কেউ হিন্দিতেও কথা বলেন।

লক্ষদ্বীপ ও মলদ্বীপের তফাত্ কোথায়?

দুই জায়গায় ভৌগোলিক পরিবেশ একইরকম। নীল সমুদ্র, নারকেল গাছের সারি, সাদা মিহি বালুতট, লেগুন, প্রবাল, জলক্রীড়ার সুবিধা সবই রয়েছে দুই দেশে। তবে পরিষেবা অনেক ভালো মলদ্বীপে। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষদ্বীপে যদি পরিকাঠামোহীন ভ্রমণ শুরু হয় তা হবে ধ্বংসাত্বক। কারণ ইতিমধ্যেই আমরা দেখেছি, ভারতীয় পর্যটকদের একটা বড় অংশ নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন নন। খেয়ে প্লাস্টিক ফেলছেন সমুদ্রের ধারে। যথেচ্ছ ভাবে জায়গা নোংরা করেন। এর প্রভাব লক্ষদ্বীপের পরিবেশ ও সামুদ্রিক জীবনে পড়তে বাধ্য। মলদ্বীপে ভ্রমণ খুবই খরচ সাপেক্ষ। এখানে বিলাসিতা বেশি। তবে মলদ্বীপ সমুদ্র সৈকক পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে বেশ এগিয়ে। গোটা দ্বীপরাষ্ট্রের প্রতি বছর বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এলেও কোথাও সমুদ্রের ধারে প্লাস্টিক বা কোল্ড ড্রিংকের ক্যান পড়ে থাকতে দেখবেন। মলদ্বীপে প্রতিটি পর্যটকদের কাছ থেকে পরিবেশ রক্ষায় বিপুল পরিমাণ গ্রিন ট্যাক্স নেওয়া হয়।

 

কীভাবে যাবেন লক্ষদ্বীপ ?

মুম্বই থেকে বিলাসবহুল কর্ডেলিয়া ক্রুসে লক্ষদ্বীপ যাওয়া যায়। এছাড়া বাজেট ট্রিপ চাইলে কোচি থেকে এমভি কাভারাত্তি জাহাজের প্যাকেজ বুক করা যায়। ৩ রাত চার দিনের প্যকেজ হয়। ক্লাস অনুযায়ী খরচ মাথাপিছু ৩২-৪০ হাজার টাকা পড়ে। https://samudram.utl.gov.in/sprt_Packages.aspx লাক্ষাদ্বীপ যাওয়ার সমুদ্রম প্যাকেজ খুবই জনপ্রিয়। এই ওয়েবসাইটে মিলবে সমস্ত তথ্য।

এছাড়া কোচি থেকে বিমানে আভাত্তি যাওয়া যায়। সেখান থেকে অন্য দ্বীপ ঘুরে নেওয়া যায়। খরচ মাথা পিছু অন্তত ৩ রাত ৪ দিন ধরলে ৩৫ হাজারের ওপরেই হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 − seven =