নতুন বছরে বঙ্গ ক্রিকেটে খুশির হাওয়া। আসতে চলেছে বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগ। বঙ্গবাসী তৈরি তো? সিএবি কিন্তু প্রায় তৈরি। আর আইপিএলের জন্য সারাবছর ধরে অপেক্ষা নয়। এ বার আইপিএলের ধাচে খাস বাংলায় হবে বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগ। ইতিমধ্যেই যার অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা সিএবি। দায়িত্বে রয়েছেন খোদ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মহারাজ যেখানে রয়েছেন, সেখানে রাজকীয় কিছু যে থাকবে তা বেশ ভালোই আঁচ করা যাচ্ছে। আনন্দবাজার প্রত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন বছরের প্রথমের দিকেই এই লিগের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে সিএবি। শোনা যাচ্ছে, প্রথম সারির ক্রীড়া চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার হবে এই লিগ।বেশ কিছু বছর ধরে এই লিগের ভাবনা ছিল
সিএবির মাথায়। সেই মতোই ব্লু প্রিন্ট সাজিয়ে নিয়েছিলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ও প্রাক্তন ক্রিকেটার ও সিএবি সদস্য সঞ্জয় দাসরা। গত বছরই ভারতীয় বোর্ডের অনুমোদন পেয়েছে সিএবি। তারপর থেকেই জোরকদমে শুরু হয়েছে পরিকল্পনা। তবে সবটা এখনও গুছিয়ে উঠতে পারেননি স্নেহাশিসরা। বঙ্গ ক্রিকেটে নতুন চমক আনতে চলেছে এই লিগ। অন্যান্য রাজ্যে আইপিএলের ঢংয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ চালু হলেও সেখানে মহিলাদের সুযোগ ছিল না। মহিলাদের কথা ভেবে তাই এই লিগে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ভেবেছে সিএবি। শোনা যাচ্ছে, পুরুষ ও মহিলাদের নিয়ে এই লিগ হবে। পুরুষদের লিগের মুখ হবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং মহিলাদের লিগের নেতৃত্ব দেবেন ঝুলন গোস্বামী। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠতি প্রতিভাদের খুঁজে বের করে তাঁদের মঞ্চ দেবে সিএবি, এমনটাই ভাবনা তাদের।
আইপিএলের শেষ হওয়ার অন্তত ১৪ দিন পর এই লিগ শুরু করতে হবে। শুধু নিজের রাজ্যের ক্রিকেটারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে এই লিগ। এমনকী কোচও থাকবেন রাজ্যের। বাইরে থেকে কোনও কোচ বা ক্রিকেটারদের ভাড়া করা যাবে না।
আইপিএলের নাম করা কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে কথা বলেছেন সিএবি কর্তারা। তার মধ্যে অন্যতম শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স। এ ছাড়া রয়েছে নীতা আম্বানির মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও গোয়েঙ্কাদের লখনউ সুপার জায়ান্টস। জানা যাচ্ছে, এই সব ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকদের সঙ্গে সৌরভ নিজে কথা বলেছেন। দল কেনার জন্য আগ্রহও প্রকাশ করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা, এমনটাও খবর।
নতুন বছরের মে মাসের মধ্যেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে আইপিএল। কোটিপতি লিগ শেষ হওয়ার ১৪ দিনের মাথায় বিপিএল শুরু করার কথা ভাবছে সিএবি। সেই সময় বর্ষা থাকবে তাই সবটা মাথায় রেখেই দিনক্ষণ চূড়ান্ত করবে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা। আবার সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়ে যাবে ঘরোয়া ক্রিকেট। ফলে ক্রিকেটারদের পাওয়া যাবে না। এই বিষয়টাও ভাবতে হচ্ছে সিএবিকে।
প্রত্যেক দলে ২০ জন করে ক্রিকেটার রাখার সুযোগ রয়েছে। তবে প্রথম বছরে কোনও নিলাম থাকছে না। ক্রিকেটারদের একটি নির্দিষ্ট মূল্য বেঁধে দেওয়া হবে। আর সেই মূল্য একেবারেই আকাশছোঁয়া হবে না। ড্রাফ্টিংয়ের মাধ্যমে ক্রিকেটারদের বেছে নিতে পারবে আট দল। এ ছাড়া ড্রাফ্টিংয়ে পালা করে ভালো ক্রিকেটার নিতে পারবে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। অর্থাৎ, যদি একটি দল ওপেনার বিভাগে প্রথমে বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়,অন্য দলকাছে মিডল অর্ডারে প্রথম নাম ডাকার সুযোগ পাবে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সকলেই পছন্দমতো ক্রিকেটার বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে। সব দলে যাতে সামঞ্জস্য থাকে সেই কথা মাথায় রেখেই এই নিয়ম চালু করতে চলেছে সিএবি।
রাজ্যের সেরাদের মধ্যে আট জনকে সুযোগ দেওয়া হবে। এবং প্রত্যেক দলে একজন করে মার্কি প্লেয়ার থাকবে। এ ছাড়া প্রত্যেক দলের প্রথম একাদশে এক জন করে জেলার ক্রিকেটার ও এক জন অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটারকে রাখতেই হবে। উঠতি তারকাদের তুলে আনার কাজেই বেশি জোর দেবে সিএবি। প্রত্যেক দলে কতজন করে বাংলার ক্রিকেটার থাকবেন তাও ঠিক করে দেবে কর্তৃপক্ষ। নিকটবর্তী তিন-চারটে জেলা মিলিয়ে তৈরি হবে একটি অঞ্চল। সেখান থেকেই ক্রিকেটারদের বেছে নেওয়া হবে।
আইপিএলের মতোই বিনোদনের রঙিন সুতোয় এই লিগকে বাঁধতে চলেছে সিএবি। টলিপাড়ার তারকাদের এই লিগে যুক্ত করার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। যাতে তরুণ প্রজন্মকে আরও বেশি করে এই লিগমুখী করা যায়।
বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগ কি আইপিএলের মতো জনপ্রিয়তা পাবে? বিশেষজ্ঞদের অনুমান, সময় লাগবে। তবে যে কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে দেশজুড়ে যে উন্মাদনা চোখে পড়ে তাতে এটুকু নিশ্চিত যে এই লিগ নিয়েও মাতামাতি কম হবে না। সবচেয়ে ভালো বিষয় হল বাংলার অলিগলিতে ছড়িয়ে থাকা উঠতি প্রতিভারা একটা মঞ্চ পাবেন। যেখান থেকে আরও বড় মঞ্চের দরজা খুলে যাবে তাঁদের কাছে।কে বলতে পারে এই লিগের হাত ধরেই হয়তো বাংলা থেকে উঠে আসবেন বিরাট-রোহিতদের উত্তরসূরীরা।