কাশ্মীর ফাইলস, কেরালা স্টোরির পর এবার বিতর্কের শুরু ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’-কে ঘিরে। হিন্দি ছবির এই ট্রেলারেই উঠল সমালোচনার ঝড়। শুধু তাই নয়, এই ছবির জন্য কলকাতা পুলিশ তলব করাও হল পরিচালক সনোজকুমার মিশ্রকে। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, আগামী ৩০ মে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় তলব করা হয়েছে পরিচালককে। মুম্বইয়ের বাসিন্দা সনোজকে তলবি চিঠিতে পুলিশ লিখেছে, অভিযোগের ভিত্তিতে আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হচ্ছে। তাঁকে ৩০ মে, দুপুর ১২টায় থানায় হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারার পাশাপাশি আইটি অ্যাক্টেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও ছবির পরিচালকের দাবি, এভাবে তাঁকে ডেকে পাঠানোর কোনও কারণই নেই। শুধুমাত্র হেনস্থা করার জন্য ডাকা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সানোজ। তাঁর কথায়, বাংলার রাজনীতিতে তোষণবাদ স্পষ্ট। পক্ষপাতের রাজনীতি চলে এখানে। তার উপর ভিত্তি করেই এই ছবি। সম্পূর্ণ সত্যি ঘটনা অবলম্বনে, বলে দাবি সানোজের।
প্রসঙ্গত, ছবির কাহিনি ও পরিচালনা দুই-ই সনোজের নিজের।ছবির উপস্থাপনা করেছে ওয়াসিম রিজভি ফিল্মস এবং প্রযোজনা করেছেন জিতেন্দ্রনারায়ণ সিং। সহ প্রযোজক হচ্ছেন তাপস মুখোপাধ্যায় এবং অচিন্ত্য বোস। ছবির মাধ্যমে পরিচালক বাংলার অপমান করেছেন বলে অভিযোগ। রোহিঙ্গা মুসলিম এবং বাংলাদেশি মুসলিমরা কীভাবে এই বাংলায় স্থায়ী আস্তানা গাড়তে পারল, তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ছবিতে। ট্রেলারে দেখানো হয়েছে, কীভাবে এই দুই গোষ্ঠীর লোক দ্রুত এরাজ্যে তাঁদের পরিধি বিস্তার করল। একইসঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার ভোটব্যাঙ্ককে রাজনীতির কারণে তারা কেন সমর্থন জোগাল এবং সাহায্য করল তাও। এরই পাশাপাশি ছবির পরিচালক সানোজ মিশ্র এও জানান, ‘আমার বাংলার সঙ্গে বহুদিনের সম্পর্ক। বহু ছবির কাজ করেছি। অনেকটা সময় কাটিয়েছি। শিয়ালদহের কাছে একটা হোটেলে থেকে বহু কাজ করেছি। বাংলার ছবিতেও অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেছি আমি। শিলিগুড়িতে থেকেছি বহুদিন। আমার আত্মীয়ও রয়েছে।’
ট্রেলারে আরও দেখানো হয়েছে, রোহিঙ্গারা কীভাবে নালিয়াখালি গ্রামে হিন্দুদের শয়ে শয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। সঙ্গে এও দেখানো হয়েছে, রাজ্যে কীভাবে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে মমতা প্রতিবাদ প্রচার করছেন। প্রসঙ্গত, ছবির ট্রেলার প্রথম মুক্তি পায় লখনউয়ে এক অনুষ্ঠানে। সেখানে প্রযোজক জিতেন্দ্রনারায়ণ সিং জানান, ‘দিনের পর দিন পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশি জঙ্গি এবং রোহিঙ্গা মুসলিমরা এরাজ্যে বাসা বেঁধেছে।’
ছবির আরেকজন প্রযোজক ওয়াসিম রিজভির অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার রোহিঙ্গাদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। রোহিঙ্গাদের আধার কার্ড দেওয়া হচ্ছে, তাদের নাম ভোটার তালিকায় তুলে দেওয়া হচ্ছে। এইসব কার্ড দেখিয়ে রোহিঙ্গারা সহজেই এদেশের নাগরিকের মর্যাদা পেয়ে যাচ্ছে এবং ভারতের যে কোনও রাজ্যে চলে যাচ্ছে। এসব করা হচ্ছে একটি বিশেষ কারণে বলে তিনি ইঙ্গিতও করেন।
যদিও এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এটা কোনও সিনেমা হতে পরে না। ধর্মীয় বিষ ছড়ানোর চেষ্টা। ধর্মীয় বিষ ছড়ানোর জন্য এদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’