নব্বই মিনিটের শেষে ডাগআউটে দুক্ষ্মহাতে মুখ ঢেকে কান্না সুনীল ছেত্রীর। মাঠে তখন অ্যাশলে ওয়েস্টউডকে শূন্যে তুলে সেলিব্রেশন চলছে আফগান ফুটবলারদের। দুই শিবিরের ভিন্ন চিত্র। গুয়াহাটিতে সম্পূর্ণ উলাট-পুরান। এক গোলে এগিয়ে গিয়েও ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের কাছে অপ্রত্যাশিত হার। মঙ্গলবার গুয়াহাটির রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে আফগানদের কাছে ২-১ গোলে হেরে তৃতীয় রাউন্ডে যাওয়া কঠিন হল ভারতের। পরিস্থিতি যা তাতে, কুয়েত এবং কাতারের বিরুদ্ধে পরের দুটো ম্যাচ জিততেই হবে। তুলনায় অনেক কমজোরী আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জিতলেই তৃতীয় রাউন্ডের ছাড়পত্র প্রায় নিশ্চিত হয়ে যেত সুনীলদের। কিন্তু দুই ম্যাচের মধ্যে একটা ড্র এবং অন্যটা হার, স্টিমাচের দলের জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তুলল। দলের তারকা প্লেয়ারদের ছাড়াই বিপক্ষের ডেরায় এসে ঐতিহাসিক জয় তুলে নেন ভারতীয় ফুটবলকে নখদর্পণে চেনা ওয়েস্টউড। তাঁকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। এদিন শেষ মিনিট পর্যন্ত সমানে সমানে লড়াই করে। শারীরিক দক্ষতায়ও ভারতকে পেছনে ফেলে দিল আফগানরা। জয়ের ফলে কুয়েতকে টপকে তৃতীয় স্থানে অ্যাশলের দল। গ্যালারিতে বসে ভারতের হার দেখেন ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে। দেশের জার্সিতে ১৫০তম ম্যাচ উপলক্ষে খেলা শুরুর আগে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করা হয় সুনীল ছেত্রীকে।
নিজের প্রত্যেক মাইলস্টোন ম্যাচে গোল করেছেন। দেশের জার্সিতে ১৫০তম ম্যাচ কি আর ব্যতিক্রম হয়! মঙ্গলবার গুয়াহাটির রাজিব গান্ধী স্টেডিয়াম সুনীল ছেত্রীর গোলে প্রথমার্ধের শেষে এগিয়ে যায় ভারত। ম্যাচের ৩৮ মিনিট পেনাল্টি থেকে গোল করেন ভারত অধিনায়ক। সুনীলের ৯৬তম গোল। ডানদিক থেকে ক্রস রাখেন মনবীর। বক্সের মধ্যে হাত দিয়ে সেটা আটকান হারুন আমিরি। পেনাল্টি দিতে সময় নেননি রেফারি। বাকি সময়টা পেন্ডুলামের মত ম্যাচের ভাগ্য ঘোরে। প্রথম দশ মিনিট ভারতের দাপট। আভাতে রক্ষণাত্মক মোড়কে শুরু করেছিল ভারত। কিন্তু এদিন প্রথম থেকেই আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে নামে সুনীলরা। বল তাড়া করতে দেখা গেল দলের নেতাকে। এদিন শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত ভারত। ম্যাচের ৩ মিনিটে ব্রেন্ডনের মাইনাস থেকে সুনীলের শট পোস্টে লাগে। ফিরতি বল ফাঁকায় পেয়েও বাইরে মারেন মনবীর। সিটার মিস। ম্যাচের ৭ মিনিটে আমিরির হেড ফিস্ট করে বাঁচান গুরপ্রীত। তার কয়েক মিনিটের মধ্যে আবার পতন রোখেন ভারতীয় কিপার। প্রথমার্ধে শেষদিকে গোল লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটা শট নেয় আফগানিরা। কিন্তু গোলের নীচে গুরপ্রীতকে পরাস্ত করতে পারেনি। তবে বিরতির পর ম্যাচে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় আফগানরা।
ম্যাচের ৭১ মিনিটে ১-১ করেন রেহমত আকবারি। তাঁর শট রাহুল বেকের পায়ের ফাঁক দিয়ে গোলে ঢুকে যায়। বিরতির পর প্রেসিং ফুটবল খেলে আফগানিস্তান। দ্বিতীয়ার্ধে দাপট বেশি ছিল অ্যাশলে ওয়েস্টউডের দলের। তুলনামূলকভাবে গুটিয়ে যায় ভারত। আফগানিস্তান আক্রমণে উঠলেই কেঁপে যাচ্ছিল ভারতীয় রক্ষণ। গোল সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা না করে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে ভারত। ফলস্বরূপ ম্যাচে সমতা ফেরায় আফগানিস্তান। ম্যাচের ৭৬ মিনিটে স্কানদারির দূরপাল্লার শট শরীর ছুড়ে বাঁচান গুরপ্রীত। শেষদিকে মরিয়া চেষ্টা করে ভারত। ম্যাচের ৮২ মিনিটে বাইরে হেড করেন মনবীর। শেষ পাঁচ মিনিটে বিক্রম প্রতাপকে নামিয়ে জোড়া স্ট্রাইকারে চলে যান স্টিমাচ। কিন্তু ভারতীয় গোলকিপারের একটি ভুলের খেসারত দিতে হল। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে গুরপ্রীতের সঙ্গে বক্সের মধ্যে সংঘর্ষ আফগান স্ট্রাইকারের। পেনাল্টি দেন রেফারি। ৮৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন শেরিফ মহম্মদ। তবে আশা করছেন না ভারতের কোচ। ম্যাচ শেষে স্টিমাচ বলেন, ক্ষ্মওদের দুক্ষ্মজন স্ট্রাইকার লং বল কন্ট্রোল করল, আর আমরা কিছু করতে পারলাম না। ওদের কয়েকটা পাস দেখে বোঝা যাচ্ছিল আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। তবে আমাদের প্রস্তুতির জন্য সময় আছে। এই দুক্ষ্মম্যাচে আমাদের যা করা উচিত ছিল সেটা আমরা করতে পারিনি। আমরা এদিন বল ধরে খেলতে পারিনি, প্রচুর মিস পাস হয়েছে। এরকম সহজ গোল খেলে ম্যাচ জেতা যায় না।ক্ষ্ম ৬ জুন যুবভারতীতে কুয়েতের বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষা সুনীলদের।