নিজস্ব প্রতিবেদন, আসানসোল: বুধবার ভোর থেকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার বার্নপুরে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক মহঃ সোহরাব আলির বাড়ি সহ একাধিক জায়গায় আয়কর দপ্তর বা ইনকাম ট্যাক্সের (আইটি) আধিকারিকরা হানা দেন। প্রাক্তন বিধায়কের বাড়ি ছাড়াও একইসঙ্গে সাতসকাল থেকে আয়কর দপ্তরের অভিযান শুরু হয় বার্নপুরে ধরমপুরের বাসিন্দা স্ক্র্যাপ বা ছাঁট লোহার কারবারি ও প্রোমোটার সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদের বাড়ি ও অফিসে। অভিযান চলে বার্নপুরের বাসিন্দা তাঁর হিসাবরক্ষক বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পঙ্কজ আগরওয়াল ও এক ঘনিষ্ঠর বাড়িতেও।
একইভাবে এদিন সাতসকালে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা আসেন আসানসোল শহরের মসজিদ বাড়ি লেনে অন্যতম বড় প্রোমোটার ও ব্যবসায়ী মহেন্দ্র শর্মার বাড়ি ও অফিসেও। এই ব্যবসায়ীর হিসাবরক্ষকের বাড়িতেও আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা যান বলেও জানা গিয়েছে। আয়কর দপ্তরের এই অভিযান নিয়ে এদিন বিকেল পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক মহঃ সোহরাব আলি ও মহেন্দ্র শর্মার কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সকালে সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ আয়কর দপ্তরের অভিযানের খবর পেয়ে বাড়ি ঢোকার সময় সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
বুধবার শীতের সকালে ঘুম থেকে কেউ ওঠার আগেই ভোরবেলা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা পৌঁছে যান আসানসোল ও বার্নপুরে। প্রায় ৬০ জনের মতো আধিকারিক ও কর্মীরা রয়েছেন আয়কর দপ্তরের দলে। তাঁদের সঙ্গে ১০০ জনের মতো কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান রয়েছেন। এই অভিযানকে কেন্দ্র করে বুধবার ভোর থেকেই আসানসোল ও বার্নপুর শহরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
বার্নপুরের রহমতনগরে প্রাক্তন বিধায়ক সোহরাব আলির বাড়িতে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা যখন আসেন ঘড়ির কাঁটা তখন বলছে ভোর ৫টা বেজে ২০ মিনিট। রাস্তায় তেমন ভাবে লোক চলাচলও শুরু হয়নি, সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান সহ নয়টি গাড়ি। বাড়ির বাইরে গেটের সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা বাড়ির ভেতর ঢুকে যান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এলাকার বাসিন্দা ও প্রাক্তন বিধায়কের ঘনিষ্ঠরা তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় জমান। গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই অভিযানকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়ে যায়।
পরে জানা যায়, শুধু সোহরাব আলির এই বাড়ি নয়, তাঁর ওই এলাকায় অন্য একটি বাড়িতে এই অভিযান শুরু হয়েছে। একই ভাবে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা পৌঁছে যান বার্নপুরের ধরমপুরের বাসিন্দা বার্নপুর ইস্কো কারখানার স্ক্র্যাপ বা ছাঁট লোহার কারবারি ও প্রোমোটার সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদের বাড়িতে। পাশাপাশি তাঁর একাধিক অফিস ও হিসাবরক্ষক পঙ্কজ আগরওয়াল ও এক ঘনিষ্ঠর বাড়িতে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা হানা দেন।
বার্নপুরের পাশাপাশি আসানসোল শহরের জিটি রোড লাগোয়া ব্যবসায়ী ও প্রোমোটার মহেন্দ্র শর্মার বাড়ি ও অফিসেও আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা হানা দেন। একযোগে আসানসোল ও বার্নপুরের একাধিক আয়কর দপ্তরের অভিযান এদিন সকাল থেকে শুরু হলেও, ঠিক কী কারণে করা হয়েছে, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে এদিন সকাল দশটা নাগাদ আয়কর দপ্তরের কয়েকজন কর্মীকে বাইরে থেকে কম্পিউটার ও প্রিন্টার নিয়ে প্রাক্তন বিধায়কের বাড়িতে ঢুকতে দেখা যায়।
রানিগঞ্জ বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়কের স্ত্রী নার্গিস বানো এখন আসানসোল পুরনিগমের ৮২ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর। এদিন ভোরবেলা যখন আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা প্রাক্তন বিধায়কের বাড়িতে আসেন, তখন সোহরাব আলি ও তাঁর স্ত্রী বাড়িতেই ছিলেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। সকাল আটটা নাগাদ আয়কর দপ্তরের অভিযান শুনে বাড়িতে ঢোকার সময় সংবাদ মাধ্যমকে সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘অন্য বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলাম। খবর পেয়ে আসছি। জানি না কেন তাঁরা এসেছেন। তবে তাঁদেরকে আমি সবরকম ভাবে সহযোগিতা করব।’
সূত্রের খবর, এদিন ভোরবেলা থেকেই যে, আসানসোল ও বার্নপুরে অভিযান চালানো হবে, তার প্রস্তুতি মঙ্গলবারই আয়কর দপ্তর নিয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে দুর্গাপুরে চলে আসেন আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা। এদিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ তাঁরা কুড়িটির মতো গাড়ি নিয়ে দুর্গাপুর থেকে আসানসোল ও বার্নপুরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। তারপরই একাধিক দলে ভাগ হয়ে শুরু হয় অভিযান। যদিও এই অভিযানে আয়কর দফতর কী উদ্ধার করতে পেরেছে, তা জানা যায়নি।