দুই দিনের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের অন্তিম পর্বে আগামী-বাংলার রূপরেখা এঁকে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যে বাংলা শিল্পের শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে । কৃষির পাশাপাশি শিল্পের দরজা আগামী দিনে আরও উন্মুক্ত করার প্রস্তাব রেখে মমতা বললেন, এ বছর দুই দিনের বাণিজ্য সম্মেলন থেকে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৫ কোটি বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে । তিনি আরও জানিয়েছেন, এই বাণিজ্য সম্মেলন ৪০ লাখ কর্মসংস্থান দরজা রাজ্যের মানুষের সামনে খুলে দিতে চলেছে ।
১৩৭টি মউ এবারের শিল্প সম্মেলনে হয়েছে বলেও আজ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । যাতে রাজ্যের একপ্রাপ্ত থেকে অপর প্রান্ত তথা দেশের নানা প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ এবং গতিময় হয়ে ওঠে তার জন্য একাধিক পদক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন মমতা । এই পদক্ষেপের প্রথম ধাপ হিসেবে অন্ডাল এবং বাগডোগরা বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়া হবে । পাশাপাশি পুরুলিয়া-মালদাহে বিমান বন্দর করার কথাও জানিয়েছেন মু্খ্যমন্ত্রী ।
এ দিনের মঞ্চ থেকে শিল্পপতিদের উদ্দেশে মমতার আশ্বাস, “আপনারা নিশ্চিন্তে এ রাজ্যে শিল্প স্থাপন করতে আসুন । কেউ কোনও বাধা সৃষ্টি করবে না । বাংলার মাটি দেশের মধ্যে সব থেকে নিশ্চিন্ত-নিরাপদ । এ রাজ্যে কোনও বনধ নেই । হরতাল নেই । কর্ম দিবস নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই । কোনও কোনও রাজনৈতিক দল অকারণে বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করছে । এটা ঘৃণ্য রাজনীতি ।”
সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন শিল্পপতিকে ধন্যবাদ জানান মমতা । আলাদা করে ধন্যবাদ জানান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কেও । এ দিনের মঞ্চ থেকে মমতার দাবি, করোনাকালে গোটা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে । শুধু ভারত নয়, বিশ্বের মধ্যে প্রথম বাংলা—যারা এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্য সম্মেলন করার সাহস দেখাতে পেরেছে । এর কারণ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, আত্মনির্ভরতা এবং মনের জোরকে সম্বল করেই আমরা বাণিজ্য সম্মেলনের দিকে পা বাড়িয়েছিলাম । সম্মেলনের বিপুল সাফল্যের পর মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা আগামী বছর, ২০২৩ সালে ১ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি (তিন দিন) পর্যন্ত চলবে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন ।
দেশে বিদেশের প্রখ্য়াত শিল্পপতিরা উপস্থিতিতে উজ্জ্বল বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের নজর এবার বাংলার দিকে। অনেকেই বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছেন। তবে এবার বাংলার জঙ্গল পর্যটনকে নতুন মাত্রা যোগ করতে আগ্রহী কেনিয়া সরকার। সহযোগী দেশ হিসাবে এবার কেনিয়া এসেছে বাংলার বাণিজ্য সম্মেলনে উঠোনে। সেখানে কেনিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, সাফারি টেকনোলজির পাঠ দিতে চায় কেনিয়া। এদিকে ইতিমধ্যেই বাংলার একাধিক অভয়ারণ্যে সাফারি চালু রয়েছে। শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি তো একেবারে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আর সেই সাফারিকে আরও বিজ্ঞানসম্মত, পরিবেশবান্ধব করে তুলতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে চায় কেনিয়া। এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও কেনিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা করেছেন।
এদিকে বন্য জীবজন্তুদের কোনও রকম ক্ষতি না করেই কেনিয়ার জঙ্গলকে যেভাবে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে অনেকটা সেরকমভাবেই বাংলার জঙ্গল সাফারিকেও আরও আকর্ষণীয় করার টিপস দিতে চায় কেনিয়া । এতে পর্যটনক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগেরও সম্ভাবনা রয়েছে। আখেরে এতে পর্যটনক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বিপুল সংখ্যক মানুষ উপকৃত হবেন।