বৃষ্টির আহ্বানে বরুণদেবকে তুষ্ট করতে রীতি মেনে ব্যাঙের বিয়ে হল আরামবাগে!

মহেশ্বর চক্রবর্তী

চৈত্র শেষ হয়ে বৈশাখের হাল সাল কেটে গেলেও এখনও বৃষ্টি ও কালবৈশাখীর দেখা নেই। তাই বরুণদেবকে তুষ্ট করতে এবং বাংলার বুকে বৃষ্টির আহ্বানে ব্যাঙের জাঁকজমকভাবে বিয়ে হল হুগলি জেলার আরামবাগ পাঁড়ের ঘাট মন্দিরে।

ভারতে মূলত বর্ষার জলেই ধান চাষের রীতি আছে। বর্ষার জলই বলে দেয় সেই বছরের ফসল কেমন হবে। ফলে খরা হলেই শস্য শ্যামলা দেশের বহু কৃষিজীবী মানুষের মাথায় হাত পড়ে। আর বহু পুরনো আমল থেকে এই চাষের কাজকে বাঁচানোর জন্য জলভর্তি মেঘের দিকে চাতকের মতো তাকিয়ে থাকেন কৃষকরা। সেই দিক থেকেই বৃষ্টির আশায় দেশের বিভিন্ন অংশে পালিত হয় ব্যাঙের বিয়ে। উপজাতিদের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে যে ব্যাঙের বিয়ে দিলেই বৃষ্টি নামবে। শস্য শ্যামলা হবে ধরা।

অসম তথা গোটা উত্তরপূর্বের বিভিন্ন অংশে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ উচ্চারণ করে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। ফুলের মালা, লাল চেলি, ছায়া মণ্ডপ দিয়ে এই বিশেষ বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। শুধু বিয়ে নয়, তার আগে বিয়ের দিন সকালে আয়োজিত হয় গায়ে হলুদ, বিয়ের পর গ্রামের এলাকার বয়স্করা নতুন স্বামী ও স্ত্রী রূপী ব্যাঙকে আশীর্বাদও করেন। শোনা যায়, কোনও গ্রামে এই ব্যাঙের বিয়ের খবর পেলেই আশপাশের গ্রাম থেকে বহু মানুষ সেখানে এসে ভিড় করেন। বিয়ের পর চলে হইহই করে খাওয়া দাওয়া। তবে এদিন আরামবাগে গরমের হাত থেকে বাঁচতে বৃষ্টির আহ্বানে রীতিমেনে ব্যাঙের বিবাহ হয়। ব্যাঙের বিয়ের জন্য ছায়ামণ্ডপ, পুষ্পমাল্য, গায়ে হলুদ, আশীর্বাদ, ধান-দূর্বা, ভোজন সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিল। এই বিষয়ে আরামবাগ পুররসভার প্রাক্তন  চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, গরমে মানুষ অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির জন্য বরুণদেবকে তুষ্ট করতে রীতি মেনে শঙ্খ বাঁজিয়ে, উলু দিয়ে, মন্ত্র উচ্চারনের মাধ্যমে ব্যাঙের বিবাহ দেওয়া হয়। অপরদিকে আরামবাগের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বলেন, সারা বাংলা জুড়ে তাপপ্রবাহ চলছে। পূর্ব পুরুষের রীতি মেনে ব্যাঙের বিবাহ দেওয়া হয়। প্রথা আছে ব্যাঙের বিবাহ দিলে বৃষ্টি হয় তাই এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুর মন্দিরে বিবাহ দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে গরম থেকে বাঁচতে বৃষ্টির আহ্বানে ঠাকুরের স্থানে রীতি মেনে  ব্যাঙের বিয়ে হল আরামবাগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × two =