নিজস্ব প্রতিবেদন, কাঁকসা: প্রবল শীত উপেক্ষা করেই জমজমাট কাঁকসার মুড়ি মেলা। প্রতি বছরের মতো এবছরও মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে কাঁকসার মাধবমাঠ সংলগ্ন দু’নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাসের ধারে ফাঁকা মাঠের মধ্যে গত প্রায় ৭০০ বছর ধরে গৈ ধারা মায়ের মন্দিরে পুজোর আয়োজন হয়ে আসছে। গোটা এলাকায় মা মনসা এখানে গৈ ধারা নামেই প্রসিদ্ধ।
স্থানীয়দের দাবি, গত ৭০০ বছর ধরে পুজোর পাশাপাশি মেলার ও আয়োজন হয়ে আসছে। তবে ৩০০ বছর আগে মন্দিরের পাশে একটি জলাশয়ের উৎপত্তি হয় দেবীর দৈব মতে। গ্রামবাসীদের অনুমান, গঙ্গার সঙ্গে এই জলাশয়ের যোগ রয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, মকর সংক্রান্তির দিন জলাশয়ের চারপাশজুড়ে ভক্তরা টুসু গান করতেন এবং জলাশয়ের চারপাশজুড়ে টুসু গানের প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হত আগে। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা আজ আর হয় না।
কথিত আছে, এই জলাশয়ে ডুব দেওয়ার পর কোনও নিঃসন্তান দম্পতি পুকুরের মাটিতে হাত দিয়ে যা পেতেন সেটা ভক্তি ভরে দেবীর কাছে মানসিক করে নিজেদের কাছে রেখে দিতেন। পরে তাঁদের মানসিক পূরণ হলে বা তাঁরা সন্তান লাভ করলে, পুনরায় জলাশয় থেকে পাওয়া বস্তু জলে ডুব দিয়ে ভাসিয়ে দিতেন তাঁরা। এই আস্থা নিয়ে বহু নিঃসন্তান দম্পতি আজও মকর সংক্রান্তির দিন জলাশয়ে স্নান করতে এবং পুজো দিতে আসেন।
এছাড়াও গ্রামের মানুষদের কাছে শোনা যায়, এলাকার রাখালরা সারা বছর গোরু নিয়ে মাঠের মধ্যেই চড়াতেন এবং মকর সংক্রান্তির দিন তারা গামছায় মুড়ি এবং তেলেভাজা কিনে জলাশয়ে স্নান করে মন্দিরে পুজো দিয়ে ফাঁকা মাঠের মাঝে গামছায় বাঁধা মুড়ি ও তেলেভাজা খেয়ে তারা মকর সংক্রান্তি পালন করতেন। বর্তমানে এই মেলা এখন মুড়ি মেলা নামে পরিচিতি পায়। এমনিতেই পানাগড়ে প্রবল শীত অনুভূত হয়।
শীতের দুপুরে মকর স্নান সেরে এলাকার মানুষ বাড়ি থেকে মুড়ি নিয়ে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে মন্দিরে পুজো দিয়ে ফাঁকা মাঠে বসে মেলা থেকে তেলেভাজা কিনে পিকনিকের আমেজে গোটা দিন কাটান। দুপুর বারোটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত মাত্র কয়েক ঘণ্টার মেলায় হাজার হাজার ভক্ত ভিড় জমায় প্রতিবছর।
কাঁকসার পাশাপাশি বুদবুদ, বর্ধমান ও আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় জমান। দিন যত এগোচ্ছে মেলার আকারও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণে যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তাই গোটা এলাকাজুড়ে কড়া নজরদারির জন্য মোতায়েন ছিল কাঁকসা থানার পুলিশ।