বৃষ্টির ভ্রুকুটি অগ্রাহ্য করে মহানবমীতে জমজমাট হাওড়ার দূর্গাপুজো।
বল্লভবাটি এ্যাথলেটিক ক্লাব:-
হাওড়ার জগৎবল্লভপুর ব্লকের বল্লভবাটি এ্যাথলেটিক ক্লাবের পুজো এবারে ৩৩ তম বর্ষে পদার্পন করল। বাওয়ালীর রাজবাড়ির অনুকরনে এবারের পূজা মন্ডপ তৈরি হয়েছে।একই সঙ্গে তারা দর্শনার্থীদের কাছে নব দুর্গা মূল আকর্ষণ।
মাশিলা অমর সংঘ:-
সাঁকরাইল ব্লকের মাশিলা অমর সংঘের পুজো এবছর চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করল । করোনা পরিস্থিতির পরে গ্রামের মানুষদের একত্রিত করতে এই পূজোর সূচনা করেছিলেন গ্রামের মহিলারা। সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত এই পুজোয় উপলক্ষে গোটা গ্রাম আলোয় সেজে ওঠে । পুজোর চার দিন চলে এলাকাবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা ও খাওয়া দাওয়া চলে। সাবেকি রনংদেহি প্রতিমাই এই দূর্গাপুজার মূল আকর্ষণ ।
সলপ মঠবাগান সংঘ:-
হাওড়ার শলপ মঠবাগান সংঘের ৩১ তম বর্ষে ‘স্বপ্নের দেশে উড়ান’ তাদের চিন্তা ভাবনা । অতীতে মানুষের চারপাশে প্রচুর পাখি, গাছপালা, সবুজে ভরে থাকতো। যদিও বর্তমানে যথেচ্ছ নগরায়নের কারণে সবুজ প্রকৃতি ধ্বংস করে অট্টালিকা তৈরি চলছে। ছেলেবেলার সেই জগতকেই ফিরে পেতে তাদের এই চিন্তা ভাবনা। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হয়েছে দেবী প্রতিমা ।
দুইল্যা নেতাজি রিক্রিয়েশন ক্লাব:-
সাঁকরাইল ব্লকের অন্যান্য বারোয়ারি দূর্গাপূজার থিমের দৌড়ে না ছুটে, একেবারে সাবেকিয়ানা ও বাঙালীর চিরন্তন ঐতিহ্য মেনে ৩৮ তম বর্ষে সাবেকি পুজোই মূল আকর্ষণ দুইল্যা নেতাজি রিক্রিয়েশন ক্লাবের। পুজোর পাশাপাশি চার দিন ধরে উদ্যোক্তারা পরিবেশ সচেতনতার উপর বিশেষ প্রচার করেন।
পুইলা অকাল বোধন সার্ব্বজনীন দুর্গোৎসব:-
সাঁকরাইল ব্লকের পুইলা অকাল বোধন সার্ব্বজনীন দুর্গোৎসব এবারে ৬৯ তম বর্ষে পদার্পন করল। এবছরে পুরুলিয়া ছৌ-নাচ শিল্পকে মাথায় রেখে তারা তাদের পুজো আয়োজন করেছেন। মন্ডপে বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে সেই চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রয়েছে ছৌ-নাচ ব্যবস্থাও । তাদের মূল আকর্ষণ মা দুর্গা ও রামচন্দ্রের অকালবোধন প্রতিমা ।
আন্দুল মহিয়ারী ‘আমরা সবাই’ দুর্গোৎসব কমিটি:-
হাওড়ার আন্দুল মহিয়ারী আমবাগান এলাকার ‘আমরা সবাই’ দুর্গোৎসব কমিটি ডিজনিল্যান্ড তৈরি করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার প্রয়াস করেছে । এই বছর ৫৮ তম বর্ষে শিশুদের জন্য কিছু অভিনব করার চিন্তাভাবনা থেকেই এই থিমের ভাবনা বলেই উদ্যোক্তারা জানিয়েছে । বিগত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা এই মন্ডপ প্রস্তুত করেছেন । ইতিমধ্যেই গোটা জেলায় এই মণ্ডপ যথেষ্টই সাড়া ফেলে দিয়েছে। তবে মন্ডপে থিমের প্ৰতিমা থাকলেও পুজার প্রথা অনুসারে সাবেকি প্রতিমাই এই মণ্ডপে পূজিত হচ্ছে।
হাওড়া কোনা খেলাঘর:-
হাওড়ার কোনা খেলাঘর সঙ্ঘে দুর্গাপুজোয় এই বছর ২৪ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। দেবাদিদেব মহাদেবের মহাকাল মন্দির-এর অনুকরণে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে । মহাদেবের ছবি ত্রিশূল ও ত্রিনেত্র মন্ডপের সর্বত্র রয়েছে । এখানে রনংদিহি রূপেই সাবেকি একচালার প্রতিমা রয়েছে। সমগ্র মণ্ডপে চন্দননগরের আলোকসজ্জা রয়েছে।
ব্যাঁটরা নবীন সংঘ:-
দূর্গাপুজাতে যারা পাহাড় পছন্দ করেন তাদের আর এবছর পুজোয় দার্জিলিং, সিকিম অথবা সিমলা যেতে হবে না, এমনটাই দাবি করছেন ব্যাঁটরা নবীন সংঘের পুজা উদ্যোক্তারা। পাহাড় প্রেমী মানুষকে আসতেই হবে হাওড়ার এই মণ্ডপে। এই বছর ৬২ তম বর্ষে ব্যাঁটরা নবীন সংঘের ‘পাহাড়ের পূজা ‘ এবারের ভাবনা। শহরের মধ্যেই শিল্পী অনবদ্য সৃষ্টিতে তৈরি হয়েছে এক অসম্ভব সুন্দর পাহাড়ি পরিবেশ। দর্শকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে পাহাড়ি সেই খারাই রাস্তা, ঝর্ণা জল, পাহাড়ের চুরোয় রয়েছে একাধিক হোটেল ও বৌদ্ধ মন্দির। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাহাড়ি দেবীর আদলে প্রতিমাও তৈরি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এক টুকরো পাহাড় যেন নেমে এসেছে হাওড়া শহরের বুকে।
উত্তর খুরুট বারোয়ারি:-
বর্তমানে শিশুদের মাঠে ময়দানে খেলা থেকে অনেকটাই দূরে সড়ে গিয়ে ডিজিটাল জগতে বা মোবাইলে বেশি ঝুঁকে রয়েছে। তাই শৈশব বাঁচাতে উত্তর খুরুট বারোয়ারি তাদের ৮৪ তম বর্ষে থিম ‘ঠোঙার মৌচাক’ । এই থিম ফুটিয়ে তুলতে মন্ডপে বাইরে তারা ব্যবহার করেছেন শাল পাতার বাটি ও মন্ডপের অন্দরে অসংখ্য কাগজ মুড়ে সৃষ্টি করেছেন মৌচাকের আকৃতি। পাশাপাশি নিজেদের ঐতিহ্যের কথার মাথায় রেখে সাবেকি আদলেই তৈরি হয়েছে তাদের প্রতিমা।
হাওড়া সরস্বতী ক্লাব:-
বিশ্বজুড়ে হিংসা ও হানাহানির অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে ও শান্তির বার্তা প্রসারিত করতে হাওড়া সরস্বতী ক্লাব বৌদ্ধ মন্দির স্বেতওয়া প্যাগোডা অনুকরনে তাদের ৭৭ তম বর্ষে মণ্ডপ প্রস্তুত করেছেন । মূলত বাঁশ, কাপড় ও থার্মোকল দিয়ে মন্ডপ প্রস্তুত করা হয়েছে । মন্ডপের অন্দরে রয়েছে বৌদ্ধ মূর্তি । প্রতিমাতেও রয়েছে সাবেকি ছোঁয়া ।
সালকিয়া সাধারণ দুর্গাপুজো কমিটি:-
উত্তর হাওড়া জটাধারী পার্কে আয়োজিত সালকিয়া সাধারণ দুর্গাপুজো এই বছরে ৯০ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে । সন্তানের সঙ্গে মাতা-পিতার সম্পর্ক ও দায়িত্ব তাকে ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা করে তারা এই বছরের মণ্ডপ প্রস্তুত করেছেন। তাদের থিমের ভাবনাতে কিভাবে একজন পিতা বা মাতা তাদের সন্তানকে সমস্ত বাধা অতিক্রান্ত করে বড় করে তোলে সেই সংগ্রামকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
বেলগাছিয়া ছাত্র মিলন সংঘ:-
এই বছরের পুজাতে দর্শকদের জন্য হাওড়ার বেলগাছিয়া ছাত্র মিলন সংঘ রাজস্থানের হাওয়া মহল তৈরি করেছে। এই তাদের মাতৃ আরাধনা ২১ তম বর্ষে পদার্পন করল। সুবিশাল এই মন্ডপ ও সাবেকি প্রতিমার রুপ দেখতে ইতিমধ্যেই দর্শণার্থীদের ভিড় উপছে পড়ছে।
জগাছা আড়ুপাড়া মিলন সংঘ:-
হাওড়ার জগাছা আড়ুপাড়া মিলন সংঘের ৩৭ তম বর্ষের থিম ‘জীবন না জীব’। আমাদের জীবনে হেলমেট কতটা প্রয়োজন তা বোঝাতেই তাদের এই ভাবনা । গোটা মন্ডপে অসংখ্য হেলমেটের ব্যবহার, দুর্ঘটনাগুস্ত মোটর বাইক, বিভিন্ন মডেল মাধ্যমে মধ্যযুগে গ্লাডিয়েটরদের হেলমেট ব্যবহারকেও তুলে ধরা হয়েছে। নিজের জীবনের সুরক্ষাতে হেলমেটের ব্যবহার কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেই বার্তা দিতেই পুজা উদ্যোক্তাদের এই উদ্যোগ। থিমের সঙ্গে সংগতি রেখে তৈরি হয়েছে প্রতিমা।
সালকিয়া সাংস্কৃতিক সংঘ দুর্গা বাড়ি পুজো:-
হাওড়া বাবুডাঙ্গা এলাকার সালকিয়া সাংস্কৃতিক সংঘ দুর্গা বাড়ি পুজো এই বছর ৬০তম বর্ষে পদার্পণ করল। এই বছর তাদের এবছরের থিম লাল মাটির পুরুলিয়ায় । গোটা মণ্ডপ জুড়ে আদিবাসীদের বিভিন্ন মডেল , ছৌউ নাচের মুখোশ, লাইভ ধামসা মাদল ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাওড়ার ব্যাঁটরা মহিলা সংঘ:-
হাওড়ার ব্যাঁটরা মহিলা সংঘ এবারের ষষ্ঠ বর্ষে পদার্পন করল। এই বছরে তাদের ভাবনা “নবপত্রিকা”। এখানে গোটা মণ্ডপটি প্রস্তুত করা হয়েছে লোহার সামগ্রী দিয়ে। লোহার কারবারের সঙ্গে যুক্ত এই এলাকার অতীত ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এবারের এই ভাবনা বলেই জানা যাচ্ছে কমিটির পক্ষ থেকে। সম্পূর্ণ মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত এই পূজা। প্রতি বছরের মতই ভিন্নধর্মী ভাবনা নিয়ে দুর্গাপূজাতে নতুনত্বের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় এই মহিলা পরিচালিত দুর্গাপূজা।