হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে কী করবেন?

বৃষ্টির নাম-গন্ধ নেই। এপ্রিলেই একাধিক জেলায় তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা কোথাও ৪০ ছাড়িয়েছে। কোথাও ৪০ ছুঁই ছুই। ইতিমধ্যে গরমে অসুস্থ হয়ে একাধিক প্রাণ গিয়েছে। গরম যতই হোক, কাজের জন্য বের হতেই হবে। অত্যধিক গরমে হিট স্ট্রোক খুব বড় একটা সমস্যা। কীভাবে এড়ানো যাবে সমস্যা জানার আগে জানা দরকার হিস্ট স্ট্রোক কী, উপসর্গই বা কী?

 হিট স্ট্রোক

চিকিৎসকদের মতে, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কোনেও কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালী প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমে যায়। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় থাকলে বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং হিট স্ট্রোক দেখা দেয়। চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে যে থার্মোস্ট্যাট রয়েছে, তার মাধ্যমেই দেহের তাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। হিট স্ট্রোকে বাইরের অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে প্রথমেই বিকল হয় হাইপোথ্যালামাস। তাতে দেহতাপ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়ে ঘাম নিঃসরণও বন্ধ হয়ে যায়।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো কী?
তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্প অথবা হিট এক্সহসশন হতে পারে। হিট ক্র্যাম্পে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা পায়। এর পরের ধাপে হিট এক্সহসশনে দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি দেখা দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে এবং শরীর অত্যন্ত ঘামতে থাকে। কোনও সময় খিঁচুনি, বমি হয়। অনেকের ঘাম হওয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে অজ্ঞান হয়ে যান।

উপসর্গ

শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ ডিগ্রিº ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়।
ঘাম বন্ধ হয়ে যায়। ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়।
নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
রক্তচাপ কমে যায়।
খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতা ইত্যাদি।
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।
রোগী শকেও চলে যায়। এমনকী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

হিট স্ট্রোকের প্রতিরোধ কীভাবে

হালকা, ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরুন।যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন।
বাইরে যেতে হলে টুপি, ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করুন। সঙ্গে অবশ্যই খাবার জল রাখুন।
প্রচুর জল ও অন্যান্য তরল পান করুন। মনে রাখবেন, গরমে ঘামের সঙ্গে জল ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়। তাই জলের সঙ্গে সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয় যেমন-খাবার স্যালাইন, ফলের রস, শরবত ইত্যাদিও পান করতে হবে।

হিট স্ট্রোকে প্রাথমিক চিকিত্সা

প্রথমেই রোগীকে ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।

তার ঘাড়ে, মাথায়, শরীরে ঠান্ডা জল পারলে বরফ জল ভালভাবে দিতে হবে।

খিঁচুনি বা শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দুম করে জল খাওয়াতে না যাওয়াই ভাল, কারণ শ্বাসনালীতে জল আটকে গেলে হিতে-বিপরীত হবে।

অনেকের তীব্র ঘাম হয়। তাঁদের ক্ষেত্রে দ্রুত ঠান্ডা জায়গায় গিয়ে ঘাড়ে, বগলে, কুঁচকিতে বরফ দিতে হবে।

রাস্তাঘাটে অসুস্থ বোধ করলে চেষ্টা করুন কোনও এসি দোকান বা শপিং মলে দ্রুত চলে যেতে।

বিপদ এড়াতে নরম কাপড়ের টুকরো ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে সঙ্গে রাখুন। তা দিয়ে ঘাড়, মুখ মুছতে থাকুন। যাতে চট করে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে না পারে।

আর এরকম বিপদ হলে রোগীকে ঠান্ডা জল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

সময়ে চিকিতসা না হলে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুও হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − four =