একাকীত্ব গ্রাস করছে? ভয় না পেয়ে উপভোগ করুন

অরিন্দমবাবু। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের উঁচু পদে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ছেলে কাজের সূত্রে বিদেশে। ভেবেছিলেন অবসরের পর স্বামী-স্ত্রী ঘুরে বেড়াবেন। কিন্তু সব ইচ্ছে পূরণ হয়! অবসরের এক বছরের মধ্যেই মারা গেলেন স্ত্রী নীলিমা। তিনি এখন একলা। বিরাট বাড়ি, স্মৃতি যেন গিলতে আসে।

বছর ত্রিশের পিয়াঞ্জলি। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ব্যাঙ্গালোর। আইটি সেক্টরে কর্মব্যস্ত স্বামী। সকালে বের হয়, রাতে ফেরে।দিন যেন কাটতেই চায় না। বিয়ের পর পর দাম্পত্যে উত্তেজনা, আবেগ ভরপুর ছিল। কিন্তু দিনে দিনে সবটাই থিতিয়ে গেছে। স্বামী, ঘর সংসার থাকলেও একাকীত্বে ভুগছেন তিনি।

বয়স্ক হোক বা তরুণ প্রজন্ম, কোথাও যেন একাকীত্ব, তা থেকে অবসাদ পাহাড়প্রমাণ হয়ে উঠছে। বিশেষত বয়সকালে। যখন পরিবারের অন্যান্যরা নিজেদের মতো ব্যস্ত, তখন যেন সময় কাটতেই চাইছে না।এর থেকেই অভিমান, বিষন্নতা। শরীর খারাপ। ভয় চেপে বসা।

সকলেরই প্রশ্ন এই একাকীত্ব থেকে কি মুক্তি নেই?

আছে। আর তার চাবিকাঠিও আছে আপনার কাছে। প্রথমেই বদলে আনতে হবে ভাবনায়। অনেকেরই অভিমান ছেলেটা বিয়ে করে পর হয়ে গেল। ছেলেটা বিদেশে। এত ব্যস্ত বয়স্ক বাবা-মার খোঁজ নেয় না।একবার ভাবুন, ছেলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে কি আপনার মনে বাড়তি খুশি নেই? আর বয়স মানেই আপনি একলা কেন?

ধরুন যে কাজগুলো আপনার করা হয়নি আগে সময়ের অভাবে। সেগুলো কি করার কথা ভেবে দেখা যায়?

পার্কে বেড়ান, মন্দিরে যান- অঢেল সময়। তাহলে, সকাল অথবা বিকেল পার্কে, মাঠে হাঁটতে বের হন না। দেখবেন ভাল লাগছে। দেখবেন বয়সকালেও বন্ধু হয়ে যাচ্ছে। নিজেরাই দল বেঁধে ঘুরে আসুন। পিকনিক করুন। আড্ডা দিন।মন্দিরেও কিন্তু প্রচুর বয়স্ক পুরুষ, মহিলা আসেন। সেখানেও কিন্তু ভাল সময় কাটতে পারে।

দুঃস্থদের পড়ান-আপনার বাড়ির যিনি গৃহকর্মে সাহায্য করে বা বাগান পরিচর্যা করে, দেখুন হয়তো তাঁদের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনার জন্য ভাল শিক্ষক পাচ্ছেন না।তাঁদের সঙ্গে কথা বলেও কিন্তু দুঃস্থ ছেলেমেয়েদর পড়ানোর দায়িত্ব নিতে পারেন। দেখবেন জীবনের নতুন অর্থ হচ্ছে।নিজে ভাল বই পড়ুন।সিনেমা দেখুন।

বেড়াতে যান-একলা যেতে ভয় করলে, ট্র্যাভেল এজেন্সির সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন। জীবনটাকে পুরোদমে উপভোগ করুন।

পছন্দের কোর্স জয়েন করুন-একাকিত্বে ভোগা পিয়াঞ্জলির জীবনটাই বদলে দিয়েছিল একটা কোর্স। একদিন পিয়াঞ্জলি একটা বিজ্ঞাপন দেখেন বাড়ির সামনে কেক, চকোলেট তৈরি শেখান হয়। সেই কোর্স জয়েন করে, এখন মুখে হাসি পিয়াঞ্জলির। কয়েকজন মহিলা মিলে অনলাইন কেক ডেলিভারির ব্যবসাও শুরু করেছেন তিনি। তাই বয়স হয়েছে বলে মুষড়ে না পড়ে যোগ ব্যায়াম, রান্না, গান, যেটা ভাল লাগে সেই কোর্স জয়েন করুন। দেখবেন আর পাঁচ জনের সঙ্গে দিব্যি সময় কেটে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + four =