‘শিক্ষা দপ্তর অর্থাত্ বিকাশ ভবন হয়ে উঠেছিল দুর্নীতির ঘুঘুর বাসা।‘ কুন্তলের বিরুদ্ধে ইডি যে চার্জশিট জমা দিয়েছে তাতে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে বলে সূত্রে খবর। পাশাপাশি চার্জশিটে এও জানানো হয়েছে যে, বিকাশ ভবনের ছ’তলার ৮ নম্বর ঘরে ২০১৭ সালের জুন মাসের তিন দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভুয়ো চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। যে চাকরিপ্রার্থীরা টাকা দিয়েছিলেন নিয়োগের জন্য, তাঁদেরই ডাকা হয় ওই ঘরে। আর এই ঘটনা ইডি-র দীর্ঘ জেরায় স্বীকার করেছেন কুন্তল স্বয়ং।
ফলে চার্জশিট থেকে এটা স্পষ্ট যে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে সরকারি কর্তাদের একাংশ সরাসরি জড়িত ছিলেন। তবে এই কথা কেন্দ্রীয় এজেন্সি আগেও আদালতে তুলে ধরেছে নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে। ইডি-র ওই চার্জশিট থেকে এও জানা গিয়েছে যে, যে ঘরে ভুয়ো চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয় সেই ঘরেই বসতেন তত্কালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এক ব্যক্তিগত সচিব। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, বর্তমানে তিনিও এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আতস কাঁচের তলায় রয়েছেন।
পাশাপাশি ইডি চার্জশিটে এও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কুন্তল এই নিয়োগের জন্য সরকারি আধিকারিকদের থেকে শুরু করে একাধিক পার্থ ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলরকে সব মিলিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়েছেন। যার পরিমাণ সম্ভবত সাড়ে দশ কোটি বলেই উল্লেখ করা হয়েছে ওই চার্জশিটে। ফলে কেন্দ্রীয় এজেন্সির আতস কাচের তলায় চলে এসেছেন সাত-আটজন সরকারি আধিকারিকও। এরই রেশ ধরে ইডি-র তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, নিয়োগ দুর্নীতিতে সরকারি আধিকারিক বা কর্মীরা কেউ চাপের মুখে এই কাজ করেছেন তা নয়। বরং এর পিছনে ছিল কাঁচা টাকার প্রলোভন। একইসঙ্গে তাঁরা অকুতোভয়ে এই কাজও করেন। কারণ, তাঁদের ধারনা ছিল স্বয়ং মন্ত্রী যখন মেন্টরের কাজ করছেন তখন তাঁদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।
পাশাপাশি ইডি-র তরফ থেকে বারবারই দাবি করা হচ্ছে যে, যে কায়দায় ওএমআর শিট জালিয়াতি হয়েছে তাতে সরকারি আধিকারিকরা সরাসরি জড়িত না থাকলে এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। কারণ শিক্ষা দপ্তরের ভিতরের লোক ছাড়া ওই কাজ করা অসম্ভব বলেই দাবি ইডি-র তদন্তকারী আধিকারিকদের।
এদিকে একই সুর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর আধিকারিকদের গলাতেও। সিবিআইয়ের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, চাকরি বিক্রির টাকা সরাসরি পৌঁছেছে বিকাশ ভবনের জনা কয়েক আধিকারিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে, তদন্তে এমন তথ্যই হাতে পেয়েছেন তাঁরা। একইসঙ্গে সামনে এসেছে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সরকারি আমলা-আধিকারিকদের সঙ্গে সরাসরি এজেন্ট যোগও। প্রসঙ্গত হাইকোর্ট থেকে বিশেষ সিবিআই আদালতে নিয়োগ দুর্নীতিতে সরকারি আধিকারিক ও কর্মী যোগের কথা বলে আসছে সিবিআই। তারই রেশ ধরে আদালতের তরফ থেকেও জানতে চাওয়া হয়, কোন-কোন আধিকারিকের বয়ান রেকর্ড হয়েছে জানতেও চেয়েছে সে ব্যাপারেও। আর এর সঠিক জবাব দিতে না পারায় সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় সিবিআইকে।
এবার সিবিআইয়ের দাবি, এজেন্ট মারফত সরাসরি টাকা পৌঁছেছে সরকারি আমলা আধিকারিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এই টাকা দুর্নীতির টাকা বলেই দাবি করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাদের আরও দাবি, এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে, সাত থেকে আটজন সরকারি আধিকারিক যাঁরা বিকাশ ভবনে কর্মরত, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে চাকরি বিক্রির টাকা। শুধুই সরকারি আধিকারিক নাকি তাঁদের পরিচিতদের অ্যাকউন্টও ব্যবহার করা হয়েছে তা এবার খতিয়ে দেখছে সিবিআই। সূত্রের খবর, এজেন্ট মারফত হস্তান্তরিত হওয়া টাকার পরিমাণ কোটি ছাড়িয়েছে।
এদিকে ইতিমধ্যেই এই দুর্নীতি মামলায় একাধিক এজেন্ট, সাব এজেন্টকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাদের মধ্যে রয়েছে ১৫ জন এজেন্ট, যাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরাসরি পৌঁছেছে সরকারি আধিকারিকদের অ্যাকাউন্টে, এমনটাই দাবি সিবিআই আধিকারিকদের। সিবিআইয়ের তরফ থেকে এ দাবিও করা হয় যে, টাকা হস্তান্তরের নথিও তাদের রয়েছে যা আগামী দিনে এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নথি হতে পারে। তবে কাদের নির্দেশে টাকা পাঠানো হয়েছে তারই খোঁজে এখন সিবিআই।