ভোটের মুখে আদ্রায় তৃণমূল নেতা খুনে হইচই পড়ে যায় জেলার রাজনৈতিক মহলে। ঘটনায় লাগে রাজনৈতিক রং। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় কংগ্রেসকে। ঘটনার পরেই গ্রেপ্তার হয় কংগ্রেস প্রার্থী-সহ দু’জন। কিন্তু এই গ্রেপ্তারের পরেও তদন্তে খামতি রাখেনি পুলিশ। সিট গঠন করে আরো জোর তদন্তে নামেন দুঁদে পুলিশ আধিকারিকরা। ঘটনার ঠিক পাঁচদিনের মাথায় আদ্রা শ্যুট আউটে তৃণমূল নেতা খুনের কিনারাও করে ফেলল পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানা যাচ্ছে, ‘বখরা’ না পাওয়াতেই আদ্রায় এই খুনের ঘটনা। আর তার জন্যই হয়তো খুন হতে হল আদ্রা এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা তৃণমূল কংগ্রেসের আদ্রা শহর সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবেকে। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ঘটনার মূল চক্রী ও রেলের সিন্ডিকেটের মাথা। উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রও।
গত ২২ জুন সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ রেলশহর আদ্রার পুরাতন বাজারের কাছে তৃণমূলের কার্যালয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান তৃণমূলের আদ্রা শহর সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবে। গুলিবিদ্ধ হয়ে জখম হন তার নিরাপত্তারক্ষীও। এই ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই পরিবারের লিখিত অভিযোগ ভিত্তিতে দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী ও কয়েক দশক ধরে চলা আদ্রা ডিভিশনের রেলের সিন্ডিকেটের মাথাকে গ্রেপ্তার করে বড়সড় সাফল্য পায় পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। পুলিশের অনুমান সিন্ডিকেটের ‘বখরা’ না পাওয়াতেই হয়তো এই গুলি কাণ্ডের ঘটনা।
এই ঘটনায় ধৃত মূলচক্রীর নাম আরজু মালিক। তার আদি বাড়ি বিহারের জামুই-এ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তিনি ঝাড়খণ্ডের বোকারোতে থাকতেন। ওই শিল্প শহর থেকেই তিনি রেলের সিন্ডিকেট চালাতেন। তার কাছ থেকে একটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। বোকার এলাকায় এই আরজু মালিক একটি ধর্ষণ মামলাতেও অভিযুক্ত।
জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ ব¨্যােপাধ্যায় বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান। বিহারের জামুই থেকেই তাকে ট্র্যাক করে মঙ্গলবার মধ্যরাতে নিতুড়িয়ার ইনানপুর এলাকা থেকে আরজু মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার করেন ঘটনায় গঠিত হওয়া সিটের সদস্যরা। বুধবার তাকে রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আরো জানান, আদ্রার খুনের ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী তথা রেলের সিন্ডিকেটের মাথাকে আগ্নেয়াস্ত্র সমেত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও নানা তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
চলতি মাসের ২২ তারিখ ধনঞ্জয় চৌবে খুন হয়ে যাওয়ার একদিন পরেই পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপকে নিয়ে স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা ‘সিট’ গঠন হয়। ওই টিমে ছিলেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অম্লানকুসুম ঘোষ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অভিযান) চিন্ময় মিত্তাল, রঘুনাথপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক যোধাবর অবিনাশ ভীমরাও। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ হত আদ্রা ও বোকারো থেকে। এই ডিভিশনে জোনাল টেন্ডার হয়। আগে এই সিন্ডিকেটের মাথা ছিল মুকুল শর্মা। তারপর জিতেন্দ্র পান্ডে হয়ে বর্তমানে-এর রাশ ছিল আরজু মালিকের হাতে। এছাড়া আরজু মালিকের হয়ে আদ্রাতে একাধিক জন কাজ করত। সেখানেই বাধা হয়ে গিয়েছিলেন নিহত তৃণমূল নেতা ধনঞ্জয় চৌবে। তাই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আরজু মালিকের সঙ্গে আদ্রার বেনিয়াশোলের বাসিন্দা ধৃত মহম্মদ জামালের আগে থেকেই পরিচিতি ছিল। এরা দু’জনে মিলেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ধৃত আরজু মালিকের নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকবার জেলেও ছিল।
সব মিলিয়ে ভোটের মুখে আদ্রায় গুলি কাণ্ডের ঘটনায় তড়িঘড়ি সিট গঠন করে মূল চক্রীকে গ্রেপ্তার করায় পুলিশকে কুর্নিশ জানিয়েছে জেলার ওয়াকিবহাল মহল।