আজও দারকেশ্বরের পাড়ে মাজার মেলায় হিন্দু-মুসলিমকে

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: একটাই দেবালয়, একটাই সমাধি। সেই সমাধিতেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ চাদর চড়ান পীর জ্ঞানে, হিন্দুরা পুজো দেন নারায়ণ রূপে। ফি বছর ৩ মাঘ এলে এই দেবালয়কে ঘিরেই শুরু হয় লক্ষ মানুষের মেলা। যে মেলা সাড়ে তিনশো বছর ধরে মিলিয়ে দেয় হিন্দু-মুসলিম হাজার হাজার মানুষকে। বাঁকুড়ার দারকেশ্বর নদের পাড়ে থাকা সুপ্রাচীন গ্রাম বীরসিংহপুরের মাজার ও তাকে কেন্দ্র করে বসা মেলাকে ঘিরে আজও উন্মাদনায় মেতে ওঠেন হাজার হাজার হিন্দু-মুসলিম মানুষ।
মন্দির-মসজিদ বা টিকি দাড়িতে আর যাই হোক না কেন, বাঁকুড়ার বীরসিংহপুর গ্রাম যেন এক ভিনগ্রহের এলাকা। একসময় দারকেশ্বর নদের পাড়ে থাকা এই গ্রাম ছিল প্রখ্যাত বাণিজ্যকেন্দ্র। বণিকরা এই গ্রামের তাঁতিদের হাতে তৈরি বিশ্বমানের বস্ত্র বোঝাই করে দারকেশ্বরে বজরা ভাসাতেন। আজ থেকে প্রায় চারশো বছর আগে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে এসে হাজির হন ইসলাম ধর্ম প্রচারক নিরগিন শাহা বাবা।
স্থানীয়দের দাবি, মন্ত্রতন্ত্রের সাহায্যে রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ছিল তাঁর বিশেষ পারদর্শিতা। এই গুণের জন্য অল্প সময়েই হিন্দু প্রধান ওই এলাকায় বিশেষ প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠেন নিরগিন শাহা বাবা। একসময় ওই গ্রামেই নিরগিন শাহা বাবার মৃত্যু হলে তাঁর সমাধিস্থলে গড়ে ওঠে একটি মাজার। হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেই অত্যন্ত জনপ্রিয় নিরগিন শাহা বাবার মাজার হয়ে ওঠে পবিত্র দেবালয়। সারা বছর দারকেশ্বরের তিরে একান্তে এই মাজার পড়ে থাকলেও, ৩ মাঘ যেন হঠাৎ জেগে ওঠে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লক্ষ মানুষের সমাগমে।
হিন্দুরা এই মাজারে নারায়ণ জ্ঞানে পুজো দিয়ে এবং মুসলিমরা এই মাজারে পীর জ্ঞানে চাদর চড়িয়ে নিজেদের মনস্কামনা জানান। মাজার সংলগ্ন দারকেশ্বর নদের চর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের ভিড়ে। শুধু এ রাজ্য বা এদেশের নয়, মাজারে চাদর চড়াতে বা পুজো দিতে বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ ছুটে আসেন বীরসিংহপুরে। একসময়ের বিখ্যাত বাণিজ্যকেন্দ্র বীরসিংহপুর যেন ফিরে পায় কয়েকশো বছর আগের চেহারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 2 =