মান্টি বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঁকুড়া
কব্জি থেকে হাতের কোনও আঙুল নেই একটা পায়ের পাতার অর্ধেকের বেশি অংশ নেই অথচ তিনি আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো তাঁর নিজের সংসারকে চালানোর জন্য সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েকে মানুষ করার পাশাপাশি বিধবা মায়ের ভরণপোষণ চালানোর জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছেন। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও মনের জোরে এগিয়ে চলেছেন তিনি। তিনি বাঁকুড়া ২ ব্লকের কস্টিয়া অঞ্চলের বছর ৩১ বিশ্বরূপ সুর। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ হয়েও তাঁর জীবনযুদ্ধের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। একজন বাউল শিল্পী, পরিবারের উপার্জন চালাতে তিনি বাউল সংগীতের পাশাপাশি লটারি বিক্রি করেন।
এর মধ্যে তিনি আবার রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করে থাকেন। তবে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো তার জীবন নয়, বাড়িতে আছে তাঁর দুই শিশু, এক ছেলে এবং এক মেয়ে। এরই মধ্যে তাঁর ছোট্ট পুত্রসন্তান জন্ম থেকে উঠে বসার ক্ষমতা হারিয়েছে। সবসময় কোলেই রাখতে হয়। এই প্রতিবন্ধী শিশুকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেখাশোনা করার দায়িত্ব বিশ্বরূপবাবুর, কারণ তাঁর প্রিয় চলে গিয়েছে এই পৃথিবী ছেড়ে মাত্র আড়াই মাস হল। আছে দু’ বছরের একটি কন্যাসন্তান। পাশাপাশি তাঁর বিধবা মা।
তাঁর হাতের অর্ধেক অংশ না থাকলেও, কব্জি থেকে দুটো হাতেই সমস্ত কাজ করে চলেছেন অবলীলাক্রমে। হাত দিয়েই চালাচ্ছেন মুঠোফোন, আবার দু’ চাকা চারচাকা গাড়িও চালাচ্ছেন। এ এক বিস্ময়কর ঘটনা। সঙ্গে আবার ছেলেকে দুধও খাইয়ে দিচ্ছেন গ্লাসে, বাটিতে করে। মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে ছুটে যাচ্ছেন বাইকের পেছনে বসিয়ে।
তিনি জানিয়েছেন বছরে পাঁচ থেকে সাতবার তিনি রক্তদান শিবিরে রক্তদান করে থাকেন। বিশ্বরূপ বাবু জানিয়েছেন তিনি মানবিক ভাতা পান ১০০০ টাকা করে, যাতে করে সংসারের কোন ওসমস্যাই ভালো করে মেটাতে পারেন না। চিকিৎসক বলে দিয়েছেন অসুস্থ ছেলে ভালো হওয়ার মতো নয়, তাই এখন ভরসা ভগবানের ওপর। কোনও ভাবে সহযোগিতার হাত যদি কেউ বাড়িয়ে দেন, তা হলে বিশ্বরূপবাবুও জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে আরো একটু ভরসা পাবেন বলে তাঁর দাবি।