অমরনাথ দর্শনে কষ্ট শেষ! পাকা রাস্তা দিয়ে ছুটবে গাড়ি

শ্রীনগর, ৯ নভেম্বর: বিপদ সংকুল গিরিপথ পেরিয়ে তুষারাবৃত শিবলিঙ্গের দর্শন। অমরনাথ নিয়ে ভক্তকুলের আবেগের শেষ নেই।এ নিয়ে একাধিক সিনেমাও হয়েছে, যেথানে কষ্টকর যাত্রা আর সেই যাত্রা শেষে অমরনাথ দর্শনের আবেগ ধরা পড়েছে। তবে ইচ্ছে থাকলেও এতদিন অমরনাথ দর্শন সকলের ধরাছোঁয়ার মধ্যে ছিল না।

কারণ গিরিপথে হেঁটে ওঠা ও নামা মোটেই সহজসাধ্য নয়। লেগে যায় ৫ দিন। শারীরিক সক্ষমতা না থাকলে সে পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব নয়। তবে, সে সব অতীত। এবার অমর নাথ পৌঁছনো যাবে পাকা সড়কে গাড়ি করেই।

পুণ্যার্থীদের কষ্ট লাঘবে এমনই এক অসাধ্য সাধন করে ফেলছে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন। চন্দনওয়াড়ি এবং বালতাল, দু’দিকের রাস্তাতেই এই সুবিধা মিলবে।পুণ্যার্থীদের সুবিধে হলেও, এতে পরিবেশের ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

কাশ্মীরের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও বেশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের আশঙ্কা, পাহাড় কেটে কংক্রিটের রাস্তা কিংবা টানেল তৈরি হলে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতে পারে কাশ্মীরে।দেবভূমি, হিমাচলের অতীতের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের উদাহরণ টেনে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে এমন করতে গিয়ে অমরনাথ গুহাকেই শেষে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না তো! প্রশ্ন তুলেছে কাশ্মীরের প্রাক্তন শাসকদল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি, ওরফে পিডিপি।

পহেলগাঁও থেকে শুরু হয় এই অমরনাথ যাত্রা। সেখান থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রাস্তা। পথ এতটাই বন্ধুর যে, পুণ্যার্থীদের এই রাস্তা পার করে অমরনাথ পৌঁছতে লেগে যায় ৫ দিন। প্রথমে চন্দনওয়াড়ি ক্যাম্প। সেখান থেকে পিসু টপ, শেষনাগ, সঙ্গম হয়ে তবে পৌঁছনো যায় অমরনাথ গুহার সামনে। স্রেফ ভক্তির জোরেই এই পথে প্রতি বছর পাড়ি দেন লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী।

এবছর অমরনাথ যাত্রার জন্য কেন্দ্রের তরফে মোট ৬২ দিন বরাদ্দ ছিল। মোট সাড়ে ৪ লক্ষ পুণ্যার্থী সেখানে গিয়েছিলেন। তার বহু আগেই তাঁদের কষ্ট লাঘবে ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ অমরনাথ মার্গের কথা ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গডকরি। এই রাস্তা তৈরিতে খরচ ধার্য হয়েছিল ৫৩০০ কোটি টাকা। গতবছর থেকেই শুরু হয়েছে এই রাস্তা তৈরির কাজ।

পিডিপির মুখপাত্র মোহিত ভান বলেছেন, এই প্রকল্প হিন্দুধর্ম এবং প্রকৃতির প্রতি হওয়া সবচেয়ে বড় অপরাধ। কাশ্মীরের কল্যাণে অবিলম্বে এই প্রকল্প বন্ধ হওয়া দরকার। কাশ্মীরের সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামিও এর সমালোচনা করেছেন।

বিজেপি অবশ্য বিরোধীদের কথা মানতে চাইছে না। তাঁদের স্পষ্ট দাবি, এই রাস্তা নির্মাণে প্রকৃতির কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। প্রাকৃতিক ভারসাম্যের দিকে নজর রেখেই রাস্তা তৈরি হচ্ছে। রাস্তা চওড়া করার সময় একটি গাছও কাটা হয়নি। বিআরও-র দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরাও জানিয়েছেন, গোটা প্রকল্পে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের দিকে বাড়তি নজর রাখা হয়েছে। বিপর্যয়ের ভয় নেই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 3 =