নিয়োগ দুর্নীতিতে ৭ জায়গায় একযোগে হানা ইডির

এবার রেশন নয়, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তেঁড়েফুড়ে ময়দানে নামতে দেখা গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের।সূত্রের খবর, প্রসন্ন রায়ের একাধিক ঠিকানায় তল্লাশি চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা। বস্তুত, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও ধৃত তৃণমূল বিধায়ক জীবন সাহারও ঘনিষ্ঠ এই প্রসন্ন। তিনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ঠিকানায় এর আগে সিবিআই তল্লাশি চালালেও এই প্রথম অভিযানে ইডি।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সাতসকালে ফের ইডির অভিযান। ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়ের একাধিক বাড়ি ও অফিস-সহ মোট ৭ জায়াগায় হানা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা। সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার নিউটাউনের বলাকা আবাসনে প্রসন্ন রায়ের ২টি ফ্ল্যাটে, আইডিয়াল টাওয়ারে প্রসন্নর আরও একটি ফ্ল্যাট এবং তাঁর নিউটাউনের অফিসে পৌঁছে যান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা। পাশাপাশি মুকুন্দপুরের নয়াবাদের একটি জায়গাতেও হানা দেয় কেন্দ্রীয় এজেন্সি। আর এখানেই সামনে আসে নয়া এক মিডলম্যানের নাম। রোহিত ঝা। জানা গিয়েছে, এই রোহিত প্রসন্ন রায়ের ঘনিষ্ঠ। নয়াবাদে এই ফ্ল্যাটে তিনি নিজেই প্রোমোটিং করেন। পরিবহণ ব্যবসায়ী থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আর্থিকভাবে ভুলে ফেঁপে ওঠেন রোহিত। তাঁর আদি বাড়ি বিহারে। তবে তল্লাশি সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে মুখ খোলেননি প্রদীপের বাবা অনুজ সিং। কার্যত মেজাজ হারাতে দেখা যায় তাঁকে।

প্রসঙ্গত, ২০২২-এর ২৭ অগাস্ট, নিউটাউনের একটি হোটেলের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রসন্ন রায়কে। সেই সময় সিবিআই-এর তরফে দাবি করা হয়েছিল, শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে এই প্রসন্ন রায় ছিলেন একজন ‘মিডলম্যান’। তাঁর মাধ্যমেই কোটি কোটি টাকা তোলা হয়। প্রসন্ন রায়, তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নামে সাড়ে চারশোটি সম্পত্তি রয়েছে বলে বলে দাবি করে সিবিআই। নিয়োগ দুর্নীতির টাকাতেই সেই সমস্ত সম্পত্তি কেনা হয়েছিল বলেও দাবি করে কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থা। পরে গত বছরের ১০ নভেম্বর, নিয়োগ দুর্নীতির দু’টি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন।

সূত্রের খবর, এদিন প্রায় আধ ঘণ্টা প্রসন্ন রায়ের অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার পরও সেখানে ঢুকতে পারেননি কেন্দ্রীয় এজেন্সির কর্তারা। এরপর যোগাযোগ করা হয় কেয়ারটেকারের সঙ্গে। ঘণ্টা দুয়েক বাদে অবশেষে প্রসন্নর অফিসে ছুকতে পারেন তাঁরা।প্রসঙ্গত, শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতর মামলায় আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রসন্ন। এদিন সেই মামলার তদন্তেই তল্লাশি ইডি আধিকারিকদের। দুর্নীতিতে ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়ের ভূমিকা কী ছিল, সেই বিষয়টি আগে খতিয়ে দেখে সিবিআই। কিন্তু দুর্নীতিতে কতো পরিমাণ টাকার লেনদেন হয়েছে সেই দিকটি অনুসন্ধান করে দেখতে চান ইডির আধিকারিকরা।

উল্লেখ্য, বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যে একাধিক মামলায় তদন্ত করছে সিবিআই এবং ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি যে সব তদন্তগুলি চালাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম এই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা। নিয়োগ সংক্রান্ত মামলাতেই প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। পরে পার্থ চট্টোপাধ্যারে ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের আবাসনেও তল্লাশি চালানো হয়। বাজেয়াপ্ত হয় বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা। এছাড়াও নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আরও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে তদন্তকারী সংস্থা। গোটা দুর্নীতিতে প্রত্যেকেরই ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × two =