প্রচারে গিয়ে অনুব্রতকে ‘মাটির ছেলে’ বলে দরাজ সার্টিফিকেট মমতার

ফের অনুব্রত মণ্ডলের প্রশংসায় তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধারে তাঁকে ‘মাটির ছেলে’ বলে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অন্যদিকে বলে রাখলেন, অনুব্রত ছিলেন বড় মনের মানুষ। তাঁর কাছে হাত পাতলে কোনও গরিব মানুষ খালি হাতে ফিরতেন না। সবমিলিয়ে বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মালের প্রচারে গিয়ে ফের একবার কেষ্টর নাম উঠে এল মমতার বক্তব্যে। এদিন ফের একবার অনুব্রতকে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন তিনি।

বুধবার আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ফুটবল ময়দানে বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী অসিত কুমার মালের সমর্থনে জনসভা করেন মমতা। সেখানেই উঠে আসে অনুব্রতের প্রসঙ্গ। গোরু পাচার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে অনুব্রতের ঠিকানা এখন তিহার জেল। মমতা বলেন, ‘কেষ্ট এখানকার মাটির ছেলে। ওঁকে আপনারা কত ভালবাসতেন। ওর বিরুদ্ধে মামলায় কী আছে আমি জানি না। ওর অগুণ কী আছে, জানি না। আইন আইনের পথে চলবে। তবে এটুকু বলতে পারি, কোনও গরিব লোক ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালে, ও তাঁকে ফিরিয়ে দিত না। গোটা জেলাটা ওর হাতের মুঠোয় ছিল।’

মমতার দাবি, ‘প্রতি ইলেকশনে ওকে নজরবন্দি করে রাখত। যাতে ইলেকশনের দিন বেরতে না পারেন।’ এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিন্হার বাড়িতে ইডি তল্লাশির কথাও বলেন তিনি। মমতার কটাক্ষ, ‘চাঁদুর বাড়িতেও রেড করল। রেড করেই বলছে, হয় বিজেপিকে ভোট দাও নাহলে ইডির কাছে যাও।’ আদালত বিজেপির মহা তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তৃণমূল নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, বিজেপি আদালতে আপিল করলে যা চাইবে তাই হবে আর অন্য কেউ যদি বিচার চায় তাদের জন্য দরজা বন্ধ। ডাকাত মাফিয়াদের বেল দেওয়া হচ্ছে। নাম না করে  বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করে বলেন, তার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস থাকলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

আদালতের নির্দেশে ২৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল নিয়ে এদিনও তিনি সরব হন। বাংলায় কি সব ßুñল বন্ধ হয়ে যাবে,  শিক্ষকের চাকরি কি আর হবে না এ প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিজেপির উদ্দেশ্যে বলেন, চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই,  চাকরি কেড়ে নিতে পারে। হাইকোর্ট টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে বিজেপি। সুপ্রিম কোর্টের কথা আমি বলছি না। সেখানে এখনও আমরা বিচারপ্রার্থী। কিন্তু হাইকোর্টে বিজেপি চাইলেই শুধু বিচার হয়। ওরা যা চায়, হয়ে যায়। আর কেউ বিচার পায় না। নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকেও কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, সবচেয়ে বড় গদ্দার যে, তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা থাকলেও কোনও বিচার হয় না। তার জেল হয় না।

বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সারা জীবন চাকরি করার পর যে সরকারি টাকা পেয়েছেন তা যদি ফেরত দিতে হয় বলা হয় তাকি তারা দিতে পারবেন? এদিনও প্রধানমন্ত্রীকে তিনি প্রচার বাবু বলে কটাক্ষ করে বলেন, ‘মিথ্যে প্রচার করে চলেছেন।  জনগণকে মিথ্যে কথা বলে ভাঁওতা দিয়ে গরিবের পকেট কেটে সেই টাকা দিয়ে নিজেদের প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে, তার একটি টাকাও কেউ পায়নি।’ তিনি দাবি করেন,  ন’কোটি মানুষকে বিনা পয়সার রেশন দেয় রাজ্য সরকার। কোভিডের সময় কেন্দ্রীয় সরকার একবার বিনা পয়সার আসন দিয়েছিল তারপর তা বন্ধ করে দিয়েছে।  গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়লাভ করেছিল। এবারে এত আসন আর পাবে না।  বিহার, উত্তর প্রদেশ, তেলঙ্গানা ইত্যাদি রাজ্যে গতবারে তুলনায় বিজেপির আসন সংখ্যা কমবে।

তৃণমূল নেত্রী বলেন, কোনওভাবেই এনআরসি করতে দেওয়া হবে না। বিজেপিকে হটানোর ডাক দিয়ে তিনি বলেন, মোদি সরকার ক্ষমতায় এলে থাকবে না ধর্মের ব্যবহার, মানুষের অধিকার, কথা বলার অধিকার, জীবন জীবিকার অধিকার কেড়ে নেবে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু হলে মানুষের ধর্ম বিক্রি হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আসলে বিজেপি ভুলে যায় যে মানুষের সমর্থন তাদের সঙ্গে আর নেই। মানুষ বিজেপিকে আর ভরসা করে না। একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসই বিজেপিকে জধ করবে। বাংলার ন্যায্য অধিকার আদায়ে তৃণমূল সাংসদরাই লড়াই করে গিয়েছেন বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। বিজেপির যোগ্য জবাব দেবে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস। তাই অন্য কোনও দল নয়, তৃণমূল কংগ্রেসকেই বেছে নেওয়ার ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + thirteen =