‘অগ্নি’ বাণে ‘শত্রু’ বধ দিবাস্বপ্ন: বিধান উপাধ্যায়

সুদীপ মহাপাত্র

তৃণমূলের শাসনকালে দুটি লোকসভায় ভরাডুবি হয়েছে। বাগে আনা যায়নি আসানসোলের সাত বিধাসভার মানুষের মন। কর্পোরেশন সহ বিধানসভা হাতে থেকেও লক্ষাধিক ভোটে হেরে ছিল তৃণমূল প্রার্থীরা। জয় পেয়েছিলেন তৎকালীন বিজেপি-তে থাকা বাবুল সুপ্রিয়। ম্যাজিক ম্যান রাজ্যের মন্ত্রী তথা পশ্চিম বর্ধমানের বর্ষীয়ান নেতা মলয় ঘটকের কাছে প্রেস্টিজ ফাইট এবার আসন্ন উপনির্বাচনে প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হাকে জেতানো। ১২ এপ্রিল আসানসোল কেন্দ্রের উপনির্বাচন। সব দলেরই প্রচারে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। একে চৈত্রের মাঝামাঝি, তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি। তার সঙ্গে বাধা চলতি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। সদ্য সমাপ্ত আসানসোল পুরনিগম-এর নির্বাচনে দলের হয়ে পরিশ্রম করা কর্মী-সমর্থকদের প্রচারে পাওয়া একটু মুশকিল হচ্ছে। তবুও যে শেষ বসন্ত হাওয়া অনেকটাই শাসক শিবিরে তা শাসক দলের লাগাতার কর্মিসভা ঘিরে বোঝা যাচ্ছে। শাসকদলের প্রার্থী নিয়ে শুরুর দিকে সমস্যা থাকলেও ভোট স্ট্রাটেজিস্ট-রা তা মেটাতে যে সক্ষম হয়েছে, তা ঠাহর করা যাচ্ছে কর্মীদের উচ্ছ্বাস দেখে। শাসক শিবির রাজ্যের বিভিন্ন নেতা-নেত্রীদের এনে কাউন্সিলর সহ বিধায়কদের নিজ নিজ এলাকায় লিডের অঙ্কের পাশাপাশি নির্বাচনে জিতের কৌশল বাতলে দিচ্ছেন, এর ফল যে শাসক শিবির পাবে তা অনেকটাই বুঝতে পারছেন ম্যাজিক ম্যান। দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এবং জনমুখী প্রকল্পগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরাই প্রধান হাতিয়ার শাসকদলের। প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হার মুখেও প্রচারে একই কথা শোনা যাচ্ছে।

২০২১ সালের বিধানসভায় বিজেপির পালে তীব্র হাওয়া থাকলেও কেবলমাত্র আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে চার হাজার ভোট আর কুলটি বিধানসভা-তে ৭০০র কম ভোটে পরাজিত হয়েছিল তৃণমূল। এবং সদ্য সমাপ্ত পুরনিগম নির্বাচনেও বিরোধী ভোট কমেছে। এই অঙ্ক অনেকটাই এগিয়ে রাখছে শাসক শিবিরের ভোট স্ট্রাটেজিস্টদের। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে ৭ টার মধ্যে রানিগঞ্জ আর জামুড়িয়া বিধানসভা ছিল বামেদের দখলে। এবারও দুটি বিজেপি-র। বাম দুর্গে কথা এখন ইতিহাস, কিন্তু সাইলেন্ট ভোটাররা যা প্রায় ৩৬ শতাংশ। সেই ভোটারদের নিয়ে একটু চিন্তিত থাকলেও তা উতরে দেবেন ম্যাজিক ম্যান আশা শাসক শিবিরের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শাসক শিবির লাউদোহা, অন্ডাল, বারাবনি, সালানপুর, চিত্তরঞ্জন এবং হিরাপুর এলাকায় সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে। এখান থেকে পাওয়া লিডই এবারের ইতিহাস রচনা করবে লোকসভা উপনির্বাচনে শাসকদলের অনুকুলে। অর্থাৎ দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জয় আসতে পারে তৃণমূলের ঘরে।

অপরদিকে প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থী হয়েছেন আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল। বিধানসভা নির্বাচন জিতে আসার ফলে আশার বাণী প্রথমদিকে শোনালেও, তা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে যত সময় এগিয়ে আসছে। বেশকিছু সভাতে আশানুরূপ ভিড় চোখে পড়েনি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা দাপুটে বিজেপি নেতার কর্মিসভায় সেই ভাবে ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। প্রচারে খামতি নেই, সকল বাধা স্বত্বেও কোথাও যেন কর্মী-সমর্থকদের মনোবল কমেছে। বাম প্রার্থীর কার্যত প্রচারহীন যাত্রা এবং জামুড়িয়ার এক নম্বর ব্লকের সাধারণ ভোটারদের অসন্তোষ শাসকদলের প্রতি। এর পাশাপাশি বাঙালি সাইলেন্ট ভোটারদের একাংশের ভোট নিয়েই ভোট ময়দানে লড়াইতে বিজেপি। বামেদের ভোট যেটা বিজেপির দিকে গিয়েছিল বিগত দিনে, তা অর্ধেক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ফলে গত দু’বার যে বিপুল সংখ্যায় আসানসোল লোকসভা আসন বিজেপি ধরে রেখেছিল সেটাতে ভাটা পড়তে পারে। এবারের নির্বাচনে বাম ভোট কোন দিকে থাবা বাসায় সেটার উপর অনেকটাই নির্ভর করবে জয়ী প্রার্থীর ভাগ্য। মূলত, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বহু বৈচিত্রময় ভোটার। বর্তমান ট্রেন্ড অনুযায়ী সিঙ্গল ফ্যামিলি ওয়ান পার্টির তত্ত্ব চলে না। ফলে বাঙালি, অবাঙালি সংখলঘুর ভোট ছাড়াও ৫ শতাংশ বাউড়ি সমাজ এবং ৪ শতাংশ আদিবাসীদের মিশ্রিত ভোটের আগাম আন্দাজ করা বেশ জটিল অঙ্ক। বিভিন্ন ভোট বিশ্লেষকদের মতে এই উপনির্বাচনে লক্ষের নীচে হলেও, লক্ষ্য ভেদে সফল হবে বিধান উপাধ্যায়, মলয় ঘটক এবং তাপস বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শাসক শিবির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 − six =