পেলিং-গেলে মিস করবেন না রাবদানসে রুইনস

সুস্মিতা মণ্ডল

জঙ্গলের বুক চিরে চলে গেছে পাহাড়ি পথ। এ পথে গাড়ি চলে না। হাঁটা যায় প্রকৃতিকে উপভোগ করতে করতে। এ পথে স্বাগত জানায় নানা রকমের পাখির ডাক। আপনি যখন যাত্রা শুরু করেন, তখন ডেকে ওঠে তারা। যখন আপনি ক্লান্ত পথিক, তখনও পাখির কলতান আপনার মনকে শান্ত করে। আর যখন আপনি গন্তব্যে পৌঁছন তখনও তারা তাদের ভাষায় আপনাকে অভিবাদন জানায়। আসলে এ জায়গা যে গাছ আর পাখিদেরই। পাহাড়ি পথের পাকদণ্ডী পেরিয়ে একসময় পৌঁছনো যায় অতি প্রাচীন এক রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ-এ। যার নাম বারদানসে রুইনস।

কাঞ্চনজঙ্ঘার অনন্য সাধারণ রূপ স্পষ্ট ও ভালভাবে দেখতেই সকলে ছুটে যান পেলিং-এ। পাহাড়, সবুজ, নদী, ঝরনা, ফুল, কুয়াশা, মেঘ, মনাস্ট্রি নিয়ে যেন ভ্রমণ পিপাসুদের অপেক্ষাতেই থাকে সিকিমের এই জনপদটি। আপার, মিডিল ও লোয়ার এই তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে পেলিং-কে। এর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা দ্রষ্টব্য স্থান। তারই একটা হল রাবদানসে রুইনস।

পেলিং-এর অন্যতম সুপ্রাচীন বৌদ্ধ মনাস্ট্রি পেমিয়াংসি। তারই খুব কাছে এই রুইনস। এই রুইনস আর্কিওলজি অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

ইতিহাস বলছে, রাবদানসে ছিল সিকিমের চোগিয়াল রাজাদের রাজধানী। সিকিমের রাজা ছিলেন তাঁরা। তাদের প্রথম রাজধানী ছিল ইয়কসম। ১৬৭০ সালে রাবদানসে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রথম চোগিয়াল ফুন্টসোং নামগিয়ালের ছেলে দ্বিতীয় চোগিয়াল তেনসুং নামগিয়াল।পরবর্তীতে গোরখা আর্মি রাবদানসে আক্রমণ করে। এখন সেখানে পড়ে রয়েছে শুধুই কয়েকটা চোর্তেন।

পেলিং-এ গিয়ে এই রুইনস-এর পয়েন্ট গিয়েও অনেকেই ট্রেকিং-এর কথা শুনে পিছিয়ে আসেন। খুব বেশি নয়, আসা যাওয়া নিয়ে বড় জোড় তিন কিলোমিটার হবে এই পথ। শুরুতেই রয়েছে পাখিদের পার্ক। যদিও সেখানে সংস্কারের কাজ চলছে। তারপরই সবুজ বনানীর মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে রাবদানসের পাহাড়ি পথ। সে পথে আপনার সঙ্গী নাম জানা, না জানা হরেক পাখি।

পথ শেষে রাবদানসে রুইনস শুরু হয়েছে। পাহাড়ের মাথায় বিশাল চত্বর সাজানো বাগানে। রয়েছে নানা রকমের পাথর। চোর্তেন। হু-হু করে বইছে হাওয়া। রঙিন ফুলে খেলে বেড়াচ্ছে প্রজাপতির দল। আর পায়ে পায়ে ঘুরছে কোনও পাহাড়ি সারমেয়। আকাশ এক্কেবারে পরিষ্কার থাকলে এখান থেকেই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার বিস্তীর্ণ শ্বেতশুভ্র শৃঙ্গগুলি। দেখা যায় পেলিং শহরটাকে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত। এমনই সুন্দর জায়গায় ভেসে আসে খানিক দূরের পেমিয়াংসি মনাস্ট্রি থেকে গুরু গম্ভীর ঘণ্টা ধ্বনি, মন্ত্রোচ্চারণের শব্দ। এই রূপ, এই অনুভব গিয়েই উপভোগ করতে হয়।

ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী এই রুইনসে আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। দুচোখ ভরে দেখতে পারেন চারপাশে। কল্পনার চোখে ফিরতে পারেন সিকিমের একসময়ের এই রাজধানীর লোক-লস্করে ভরা দিনগুলিতে।এই অনুভব হবে আপনার একান্তই নিজস্ব।

রিমবি ফলস, খেচিপেরি লেক, কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস, স্কাই ওয়াক, সিনসোরের ব্রিজ, অরেঞ্জ গার্ডেন-এর হাতছানির বাইরেও জঙ্গলের পথে ট্রেক করে ইতিহাসের গন্ধমাখা এই প্রাচীন রাজধানীর আকর্ষণ অমোঘ। শুধু জানা নেই বলেই, অনেকে এ সৌন্দর্য থেকে রয়ে যান বঞ্চিত।

মনে রাখুন-অন্তত ঘণ্টা ২ সময় নিয়ে এই পয়েন্টটি যাওয়ার চেষ্টা করুন। সকালের দিকে অথবা বিকেলে গেলে ভাল লাগবে। মনে রাখবেন জঙ্গলের পথে ফিরতে হবে। তাই বিকেলে গেলেও, ফেরার সময়টা মাথায় রাখুন। পথে চড়াই-উতরাই আছে। ট্রেকিং-এর সময় জঙ্গল উপভোগ করুন। জল খান, আস্তে হাঁটুন, ফটো তুলুন। সঙ্গে খেঁজুর, চকলেট রাখতে পারেন হাঁটার সময় এনার্জি পাওয়ার জন্য।

কীভাবে যাবেন- ট্রেনে অথবা বাসে এনজেপি বা শিলিগুড়ি যান।বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকেও আসতে পারেন। এনজেপি স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে পেলিং আসা যায়। শেয়ার গাড়িতেও জোড়থাং হয়ে পেলিং আসতে পারেন। শিলিগুড়ি থেকে বাসও আছে। পেলিং থেকেই যেতে হয় রাবদানসে রুইনস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =