ডিভোর্স মানে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়! নিজেই নিজের বন্ধু হয়ে উঠুন

একরাশ স্বপ্ন, ভালবাসা নিয়ে দুজনে ঘর বাঁধতে যান। কেউ প্রেমে পরে বিয়ে করেন, কেউ বিয়ের পর সঙ্গীর প্রেমে পড়েন। বিয়ের পর কয়েকটা মাস মধুচন্দ্রিমা। আনন্দে, খুশিতে, মান-অভিমানে কেটে যায় কয়েকটা মাস কিম্বা বছর। তারপর যে কোথা থেকে কী হয়ে যায়! সমস্যা নানা রকম। ঘর-সংসার বাঁচানোর চেষ্টা সত্ত্বেও অনেক সময় টেকে না বিয়ে।

পরিণতি বিচ্ছেদ। স্বপ্ন নিয়ে শুরু করা জীবনে বিচ্ছেদের আঘাত, তা সে নারী হোক বা পুরুষ সামলানো সহজ নয়। তারওপর এমন বন্ধু, এমন আত্মীয়, পড়শি থাকে যাঁদের খুচিয়ে ঘা করা স্বভাব। এই প্রশ্নের ভয়ে মনে যন্ত্রণা নিয়ে আরও একলা হয়ে যান বিচ্ছেদ পর্বে থাকা নারী-পুরুষ।গুটিয়ে ফেলেন নিজেকে। তারপর একাকীত্ব, ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তার ভয় তো থাকতেই। সন্তান থাকলে চিন্তা থাকে আরও। তাকে মানুষ কীভাবে করবেন?

ইদানীং সম্পর্কে ভাঙন যে বেড়েছে তা চারপাশে তাকালেই টের পাওয়া যায়। এই পরিস্থিতিতে বিবাহ বিচ্ছিন্না নারী বা পুরুষ নিজেকে সামলাবেন কী করে রইল তার টিপস।

১. শুরুতেই মন ভারাক্রান্ত থাকে। কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। প্রথম কয়েকটা দিন নিজেকেই সময় দিন। ভাবুন। কান্না পেলে কাঁদুন। ওই যে কথায় আছে, চোখের জল একদিন শুকিয়ে যাবে। সময়ের সঙ্গে সেটা হতে বাধ্য। একসময় দেখবেন কষ্ট পেতে পেতে নিজেই ক্লান্ত। ঠিক তখনই নতুন করে মাথা উঁচু করে বাঁচার শপথ নিন।

২. কাজের চেয়ে ভাল ওষুধ হয় না। এই সময় যদি আপনি মহিলা হন, আর ওয়ার্কিং না হন কাজ একটা খুঁজে নিন। বিচ্ছেদ মানে জীবনে খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন নিশ্চই। সেই খারাপটাকে নিয়ে ভাবুন কম। এই প্রশ্নটা বারবার আসে, আমি কি দোষ করেছিলাম, যে আমার জন্য এটা হল? এই প্রশ্ন করা ছেড়ে ভাবুন আপনি কী ভালবাসেন, যা এতদিন বিবাহিত জীবনে করতে পারেননি। নাচ, গান, কবিতা, আঁকা এইসব যা আপনার ভাল লাগে ধীরে ধীরে তার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলুন। আর ওই যে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আখড়া। তাকে ফাঁকা রাখবেন না। কাজ করুন। একলাই রেস্তারাঁ যান, ঘুরতে যান, দোকান যান, সিনেমা দেখুন। একা যাওয়ার অভ্যেস না থাকায়, দ্বিধা আসবে। লজ্জা করবে। কিন্তু যখন নিজের একাকীত্বকে ভয় না পেয়ে উপভোগ করতে শিখবেন, স্বাধীনতার আনন্দ পেয়ে বসবে আপনাকে। বিশ্বাস করুন এটা হবেই। শুধু আপনাকে এক পা এগোতে হবে।

৩. ডিভোর্স মানে অপর পক্ষের জন্য তিক্ততা নয়। প্রতিশোধ স্পৃহা নয়। সোশ্যাল সাইটে তার আনন্দে জীবন কাটানোর পোস্ট দেখে গুমড়ে মরবেন না কোনওভাবেই। চেষ্টা করুন অন্যের জন্য মনে যত রাগ, ঘৃনা, অভিমান থাক তাকে ভুলে যেতে। ডিভোর্সের পর সোশ্যালসাইটে তাঁকে ফলো করা বন্ধ করুন। তার প্রসঙ্গ নিয়ে বেশি প্রতিক্রয়া দেখাবেন না কারও কাছে। দেখবেন  আপনি ধীরে ধীরে সেই মানুষটির প্রতি নির্লিপ্ত হয়ে যাবেন।

৪. যদি ডিভোর্সের সময় সন্তান থাকে তাহলে তার কথা ভাবুন। ডিভোর্সের পরও তাকে সুস্থ জীবন দেওয়া বাবা-মায়ের কর্তব্য। মনে রাখবেন স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু সন্তানের বাবা-মায়ের পরিচয় বদলায় না। সন্তানের মুখ চেয়ে, বিচ্ছেদের পরও আপনারা সুস্থ সম্পর্কটুকু বজায় রাখুন। খারাপ স্মৃতি ভুলে দুজন মানুষ পাশে আছেন সন্তানের জন্য ভাবুন। আর সন্তানকে কারও কাছে যাওয়া থেকে আটকাবেন কেউ। বি প্র্যাকটিক্যাল। আর সন্তান মা অথবা বাবা যার কাছে থাকুক, দুই বাড়িতে যাতায়াত করুক সেটা সন্তানের ইচ্ছেক মর্যাদা দিয়েই করুন। দয়া করে বাবা অথবা মা একে, অন্যের সম্পর্কে সন্তানের কাছে নিন্দে করবেন না।

৫. বিবাহবিচ্ছেদের পর প্রত্যেকরই পথ কিন্তু আলাদা হয়ে যায়, আলাদা কাজ, আলাদা জগৎ তৈরি হয়। অবসাদ আসে। তাই যদি মনে করেন, কাউন্সিলিং করুন। মনোবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।

৪. অনেকেই বিবাহবিচ্ছেদের পর প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রীকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাজে কথা লিখতে থাকে। তারা ভাবে, এতে ওই ব্যক্তিটি অপদস্ত হবে। এই কাজটি করা একদম উচিত হবে না। এতে আপনার ব্যক্তিত্বের ওপরই বাজে প্রভাব পড়বে।

৬. বিবাহবিচ্ছেদের পর অনেকে এতটাই একাকিত্বে ভোগে যে খুব দ্রুত আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। অনেকে এটাকে সঠিক মনে করে, আবার অনেকে একটু ধীরে -সুস্থে এগোতে চায়। তাই যাই করবেন একটু ভাবনা চিন্তা করে। কারণ, ফের ভুল সম্পর্কে না জড়ানোই ভাল।

৭. বিচ্ছেদ ভুলতে নারী বা পুরুষ নানা ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন, খেয়াল রাখুন এমনটা করা কিন্তু কোনও কাজের কথা নয়। মদ্যপান আপনার কষ্ট ভোলাতে কিন্তু কিছুতেই পারবে না। নেশার ঘোর কাটলেই সব কষ্ট-়যন্ত্রণা ফিরে আসবে। তাই সজ্ঞানে কষ্ট থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করুন। সে সমস্ত বন্ধু, আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে তাদের সঙ্গে সময় কাটান। মনের কষ্টের কথা বেল দিন। মন হাল্কা হবে। সময় একদিন সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। নিজের ইচ্ছেক মর্যাদা দিন।যারা ট্যারা-ব্যাঁকা কথা শোনায়, তাঁদের মুখের ওপর আপনি জবাব দিন। মনে রাখুন, মনকে শক্ত করতে পারলে, আপনি ঠিক জিতে যাবেন। নতুন করে জীবনটাকে ভাবুন। খারাপের শেষে ভাল থাকবেই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − eight =