প্রত্যেক বারের মতো এবছরেও মাছের মেলাকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে হুগলি জেলার আদিসপ্তগ্রাম দেবানন্দপুর এলাকার কৃষ্ণপুর অঞ্চল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৫১৭ বছর আগে শ্রীমত রঘুনাথ দাস গোস্বামীর ঘরে ফেরাকে ঘিরে কৃষ্ণপুরে উত্তরায়ন নামে এই উৎসবের সূচনা হয়। এখানে এদিন দিনভোর নাম সংকীর্তনের পাশাপাশি বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে এক বিরাট মেলাও বসে। তবে এই মেলায় জিলিপি, পাপড় ভাজা, নাগর দোলনার থেকে মাছের আকর্ষণ বেশি বলাই বাহুল্য ।
নিয়ম মেনেই প্রতি বছর পয়লা মাঘ এখানে হরেক মাছ বিক্রি হওয়ার সুবাদে সাধারণ মানুষের কাছে এই মেলা ক্রমেই ‘মাছের মেলা’ হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। জানা যায় এই এলাকায় একসময় জমিদার ছিলেন গোবর্ধন মজুমদার। তাঁর একমাত্র সন্তান রঘুনাথ দাস পরবর্তীকালে উপাধি পেয়ে রঘুনাথ দাস গোস্বামী হয়ে ওঠেন। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর দর্শনের জন্য পুরীধামে যাত্রা করেন।
মহাপ্রভু চৈতন্যের পারিষদ নিত্যানন্দের কাছে দীক্ষা নেবেন বলে পানিহাটিতে তাঁর কাছে যান রঘুনাথ। তাঁর বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর হওয়ায় তাঁকে দীক্ষা দেননি নিত্যানন্দ। তবে ছোট্ট রঘুনাথের ভক্তির পরীক্ষা নেন তিনি। সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। বাড়ি ফেরে রঘুনাথ। এই মাছ-মেলার সূত্রপাত হয় রঘুনাথ দাস গোস্বামী বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের পরেই।
দীর্ঘ ৯ মাস পরে রঘুনাথ বাড়ি ফিরলে জমিদারের কাছে স্থানীয়রা কাঁচা আমের টক ও ইলিশ মাছ খাওয়ার আবদার করেছিলেন। শীতকালেও প্রজাদের সে আবদার রাখেন গোবর্ধন গোস্বামী। তারপর থেকেই পাঁচশো বছর ধরে পয়লা মাঘ কেষ্টপুরে এই মাছের মেলা হয়ে আসছে। সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হওয়ার দিন মেলা হয় বলে এই মেলার নাম উত্তরায়ণ মেলা হলেও কেষ্টপুরের মানুষের কাছে এটি মাছের মেলা নামে পরিচিত।
৫০ গ্রাম থেকে শুরু হয়ে ৫০ কেজি বিভিন্ন সাইজের বিভিন্ন ধরনের মাছ নিয়ে হাজির হন মাছ ব্যবসায়ীরা। এ বার ৩৪ কেজি ওজনের একটি বাগার মাছ সকলের নজর কেড়েছে। লাভ লোসকান যাই হোক না কেনো এক দিনের এই মেলায় জেলা তথা জেলার বাইরের মৎস্য ব্যবসায়ীদের আসা চা – ই – চাই।