মিগজাউমের দাপটে তৃতীয় দিনেও জলমগ্ন চেন্নাই! সকাল থেকেই মুখ ভার বঙ্গের আকাশের

ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের জেরে লন্ডভন্ড গোটা চেন্নাই শহর। একটানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরির বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই। বৃষ্টি থেমে গেলেও, জল জমে আছে চার দিকে। তৃতীয় দিনেও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন বহু এলাকা। এদিকে সকাল থেকে মুখ ভার বঙ্গের  আকাশের। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে কলকাতা সহ সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে। জেলাগুলিতে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ দিকে বৃষ্টিপাতের জেরে মাথায় হাত কৃষকদের।

বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম মঙ্গলবার অন্ধ্র উপকূলে আছড়ে পড়ে। তার পর তিন ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চলে। এর পর অবশ্য শক্তি হারায় ঘূর্ণিঝড়। তবে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের দাপটে থমকে গিয়েছে তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশের জনজীবন। তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছে, তিন দিন পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে বহু এলাকা। ঝড় এবং বৃষ্টির দাপটে অনেক জায়গাতেই বহু গাছ এবং বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। সেই কারণে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুতের তার জলের নীচেও ডুবে আছে। বিপদ এড়ানোর জন্য বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে বহু এলাকা। তবে পরিস্থিতি সামান্য নিয়ন্ত্রণে এলেই শীঘ্রই বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং একটানা অতিভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন ভেলাচেরি এবং তামবারামের বিভিন্ন এলাকা। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে চেন্নাই এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে সরকারি স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার পরামর্শ দেওয়ার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলিকে অনুরোধ জানিয়েছে প্রশাসন। চেন্নাইয়ের অধিকাংশ জায়গাতেই নিচু এলাকাগুলিতে জল ঢুকছে। অনেকের বাড়ির মধ্যেও জল ঢুকে গিয়েছে। জল ঢুকে যাওয়ার কারণে অনেক পরিবারকেই বাড়িছাড়া হতে হয়েছে। এমনকি, পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলিও জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে।

দুর্যোগে আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইতিমধ্যেই পাঁচ হাজার ত্রাণকেন্দ্র তৈরি করেছে তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন উদ্ধারকাজের বিষয়ে তদারকি করছেন। তামিলনাড়ুর সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, যে ত্রাণ তৎপরতা পুরোদমে চলছে।

জানা যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এখন শক্তি হারিয়ে ঘূর্ণাবর্তে পরিণত। ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে ছত্তিশগড়ে। তাও বৃষ্টির হাত থেকে মুক্তি নেই বাংলার। আজ কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস। কাল থেকে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। শনিবার থেকে কমবে রাতের তাপমাত্রা। ফলত, অনুমান করা হচ্ছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই শীতের আমেজ পেতে পারেন বঙ্গবাসী।

এখন মূলত পাকা ধান ঘরে তোলা হয়। সঙ্গে চাষ হয়ে থাকে আলু। অঘ্রাণ মাসে আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনায় কৃষিকাজে ডেকে আনছে সর্বনাশ। জেলায় জেলায় বৃষ্টির জন্য পাকা ধানের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনই মাটি ভিজে যাওয়ায় পিছবে আলু চাষ। ফলন কম হওয়ারও ইঙ্গিত মিলছে। শুধু তাই নয়, শীতের সবজি-ফুলচাষেও বড়সড় ক্ষতি। সবমিলিয়ে মিগজাউমের দাপটে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা। অচিরেই আরও দামি হতে পারে চাল-আলু-সবজি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − four =