আবাস যোজনার অর্থ নিয়ে তৃণমূলকে বিদ্ধ করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি

কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে বিস্ফোরক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনতে দেখা গেল তাঁকে। একইসঙ্গে উঠল কেন্দ্রীয় অনুদান নয়ছয়ের অভিযোগও। কেন্দ্রীয় সরকারের  একাধিক বরাদ্দ টাকা নিয়ে রাজ্য সরকার দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে গত কয়েকদিনে আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে নানা অভিযোগে বিদ্ধ বাংলা। জেলায় জেলায় যেতে দেখা গেছে কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিদের। আর তখনই সামনে এসেছে একাধিক গরমিলের খোঁজ। শাসকদলের সদস্য না হলে আবাস যোজনার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে এ রাজ্যে। এমনও অভিযোগ, শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যর বাড়ির একাধিক সদস্যর নাম থাকছে তালিকায়, অথচ বাদ গিয়েছেন যথার্থ বাড়ির দাবিদার যাঁরা।আর তারই রেশ ধরে শনিবার আবাস প্রকল্পের টাকা নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকার বাজেটে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। যার জেরে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৭৯ হাজার কোটি টাকা। তারই রেশ ধরে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে স্মৃতি ইরানি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দেশের জন্য ৬৬ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে। রাজ্য সরকার তা যেন সাধারণ মানুষের জন্যই খরচ করেন। নিজের দলের সদস্যদের জন্য যেন খরচ না করেন।’

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সূচনা করেন ভারত সরকার। লক্ষ্য একটাই, প্রত্যেক শ্রেণির মানুষেরই মাথার উপর যেন ছাদ থাকে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় কেন্দ্র। কারণ, গরিব মানুষকে ঘর দিতে দরাজ কেন্দ্রের মোদি সরকার। এরপরই বাংলায় এসে স্মৃতি ইরানির এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

একইসঙ্গে স্মৃতি ইরানি এদিন এও জানান, নারী ও শিশু কল্যাণে কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা অব্যবহৃত। তা খরচই করেনি রাজ্য। এই প্রসঙ্গে স্মৃতি ইরানি জানান, ‘পশ্চিমবাংলায় আমার মন্ত্রকেরই ২৬ হাজার লাখ টাকা পড়ে আছে। মহিলা ও বাচ্চাদের জন্য মোদি সরকার যে টাকা পাঠাচ্ছে, তা কেন বাংলার সরকার খরচ করছে না তার জবাব তাদের দিতে হবে।’ একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা প্রকল্প, আইসিডিএসের বিষয়েও রাজ্যকে তোপ দাগেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বলেন, টপ্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা প্রকল্পের টাকা এ রাজ্যের সরকার নিজেদের প্রকল্পে খরচ করছিল। আমরা লিখিতভাবে জানতে চাই, কেন প্রকল্পের আইন ভাঙা হচ্ছে। এ রাজ্যের সরকার আমাদের ২০২২ সালে লিখিত দিয়েছে, ওরা আর আইন ভাঙবে না। গাইডলাইন মানবে। প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনার টাকা প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনা হিসাবেই খরচ হবে। আইসিডিএস, অঙ্গনওয়াড়ির যত টাকা ভারত সরকার পোষণ প্রকল্পে দিচ্ছে। এটাও লিখিত দেওয়া হয়েছে, এই গাইডলাইন মেনেই চালাবে।’ স্মৃতি ইরানি এদিন জানান, রেলের খাতেও কেন্দ্র শুধু বাংলার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেটে ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা দিয়েছে। সঙ্গে শাসকদলের নেতাদের পরামর্শ, ‘তৃণমূল নেতারা কিছু বলার আগে একটু নিজেদের কাগজটা পরীক্ষা করে দেখে নিক।‘

এদিকে আবাস যোজন নিয়ে রাজ্যের দাবি, রাজ্যে আবাস যোজনার আওতায় ১১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪৮৮টি বাড়ি তৈরির জন্য অনুমোদন দেওয়ার কথা ছিল। সূত্রের খবর, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তার মধ্যে ১১ লক্ষের বেশি বাড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আবাস তালিকার ক্ষেত্রে এর আগে কেন্দ্র ৩১ ডিসেম্বর ডেডলাইন দিয়েছিল। পরে তা বাড়ানো হয়। অন্যদিকে সম্প্রতি কেন্দ্রকে একটি চিঠি পাঠায় রাজ্য। সেখানে বলা হয়, কেন্দ্রের তরফে প্রয়োজনীয় অর্থ না দেওয়া হলে ৩১ মার্চের মধ্যে আবাস যোজনার কাজ শেষ করা যাবে না।

এদিকে এদিনের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় জানান, ‘আবাস যোজনার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সার্ভে হয়েছিল ২০১৮ সালে। যাদের বাড়ি নেই, তাদের বাড়ির জন্য টাকা দেওয়ার বিষয় এটা। পশ্চিমবাংলায় তো সেগুলো ভালভাবেই রূপায়িত হচ্ছে। এসব না জেনে কথা বলে লাভ নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − fourteen =