নিজস্ব প্রতিবেদন, পূর্ব বর্ধমান: তাঁত শিল্পীদের কথা রাজ্য ও কেন্দ্র ভাবে না বলে ইনসাফ যাত্রায় দাবি মীনাক্ষীর।
শুক্রবার তিনি দাবি করেন, তাঁত শিল্পীদের কথা রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকারই ভাবে না। তাই তাঁত শিল্পীদের আত্মঘাতী হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এঁরা শিক্ষিত বেকার যুবকদের মতোই ইনসাফ পাচ্ছে না। কালনা মহাকুমা কৃষি নিবিড় মহকুমাও বটে। কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসলের দাম পাচ্ছেন না বলেই সারা রাজ্যের সঙ্গে এখানেও কৃষকের আত্মহত্যা দিন দিন বাড়ছে। তিনি আরও দাবি করেন, এই এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এঁদের জন্য কিছুই করছেন না। তাই আত্মহত্যার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কৃষক তাঁত শিল্পী যিনিই আত্মহত্যা করুন না কেন, সরকারি ভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরেই এঁরা আত্মঘাতী হয়েছেন। এই বে-ইনসাফি কথার বিরুদ্ধেই তাঁদের এই ইনসাফ যাত্রা।
প্রসঙ্গত, কালনা মহকুমার তাঁত শিল্প নিবিড় এলাকাগুলি হল কালনা শহর, কাদিপাড়া, নসরতপুর, সমুদ্রগড়, মাজিদা, শ্রীরামপুর প্রভৃতি। এখানে সাধারণত ঢাকাই জামদানি শাড়ি বেশি উৎপাদিত হত। আর এই শাড়ি বেশির ভাগই বুনতেন উত্তরবঙ্গ থেকে আসা পরিযায়ী তাঁত শ্রমিকরা। কিন্তু প্রথম লকডাউনে তাঁরা ফিরে যাওয়ার পর আর এদিকে কেউ পা বাড়াননি। অন্যদিকে জীবন জীবিকার টানে এখানকার তাঁত মালিকরা নিজেরাই শ্রমিক হয়ে গিয়ে তাঁতে বসে যান। কিন্তু কাপড় হাটগুলোতে তাঁত কাপড়ের খরিদ্দার না থাকায় ১২০০ টাকা মূল্যের কাপড়ের দাম নেমে আসে মাত্র সাড়ে চারশো টাকায়। ফলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হন তাঁত শিল্পীরা। আগে যে শাড়ি বুনে মজুরি মিলত ৫০০ টাকা, এখন মজুরি মেলে মাত্র দেড়শ টাকা। তাও আবার সবসময় কাজ পাওয়া যায় না। ফলে এই এলাকার সরস্বতী বসাক, নিমাই বসাক, সমীরণ বসাক, দয়াল বসাকের মতো মানুষরা সেই ক্ষতি সামাল না দিতে পেরে আত্মঘাতী হন।
ইনসাফ যাত্রার শুরুতেই শুক্রবার সকালে জনজোয়ার দেখা যায় কালনা মহকুমার পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকে। ইনসাফ যাত্রার ৪৩ দিনে নসরতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোয়ালপাড়া থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। এসটিকেকে সড়ক ধরে এই যাত্রা ৫ কিমি পথ অতিক্রম করে সমুদ্রগড়ের নিমতলায় পৌঁছয়। মধ্যাহ্নভোজনের পর আবার যাত্রা শুরু হয়ে ২ কিমি পথ অতিক্রম করে হেমাতপুর মোড়ে পৌঁছয়। সেখানে জনসভায় বক্তব্য রাখেন যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, দেবজ্যোতি সাহা সহ প্রমুখ। ইনসাফ যাত্রাকে সড়কের মোড়ে মোড়ে থামিয়ে পুষ্পস্তবক দিয়ে অভ্যর্থনা জানান বাম কর্মীরা। এই যাত্রার শেষে ৭ জানুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।