৫৫ দিনের টালবাহানার অবসান। অবশেষে মিনাখাঁ থেকে গ্রেপ্তারর সন্দেশখালির ‘নিখোঁজ’ তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। দাবি পুলিশ সূত্রে। তাঁকে বসিরহাট আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, আদালতের লকআপে রাখা হয়েছে তাঁকে। আজই তাঁকে আদালতে হাজির করানো হবে। জানা গিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে শাহজাহানকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করবে পুলিশ। বিঘার পর বিঘা জমি ও ভেড়ি দখল, নারী নির্যাতন-সহ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে পাহাড় প্রমাণ অভিযোগ রয়েছে গ্রামবাসীদের।
সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। ইডি তাঁকে ধরতে পারেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গিয়ে রাজ্য পুলিশের ওই এফআইআরের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। ফলে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে আদালতই।’
এরপরই গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট জানায়, তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখকে গ্রেপ্তার করতে পারবে রাজ্যের পুলিশ। কোনও স্থগিতাদেশ তাতে দেওয়া হয়নি। বুধবার প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সিবিআই, ইডি এবং রাজ্য পুলিশ যে কেউ শাহজাহান শেখকে গ্রেপ্তার করতে পারে।’
রেশন দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার স্ক্যানারে শেখ শাহজাহান। খাতায় কলমে এখনও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ। গত ৫ জানুয়ারি তাঁর খোঁজে সন্দেশখালির সরবেড়িয়ার বাড়িতে যান ইডি আধিকারিকরা। দুটি মোবাইল নম্বরে বার বার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। একটি নম্বর দীর্ঘক্ষণ ব্যস্ত ছিল। তবে আরেকটি নম্বরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। ইডির কথা শুনেই ফোন কেটে দেন শেখ শাহজাহান। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকশো লোক জমা হয়ে যায়। মারধর করা হয় ইডি আধিকারিকদের। ঝরে রক্ত। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। সেই আক্রমণের প্রেক্ষিতে তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। যা নিয়ে হাইকোর্টে যায় কেন্দ্রীয় সংস্থা। হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ ইডি আধিকারিকদের উপর আক্রমণের ঘটনায় সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশকে যৌথ ভাবে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল। যাকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় ইডি এবং রাজ্য পুলিশ। সেখানে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশের অষ্টম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, রাজ্য পুলিশও এই সংক্রান্ত তদন্ত থেকে দূরে থাকবে। অর্থাৎ, এই সংক্রান্ত তদন্ত থেকে রাজ্যের পুলিশকে বিরত থাকতে বলেছিল হাইকোর্ট।
হাই কোর্টের শেখ শাহজাহান সংক্রান্ত নির্দেশ এবং প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের পরে শাসক তৃণমূল সোমবার আবার দাবি করে, আদালতের কারণেই শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি রাজ্য পুলিশ। ‘জট’ কেটেছে। সাত দিনের মধ্যে শাহাজাহান গ্রেপ্তার হবেন। অবশেষে গ্রেপ্তার সন্দেশখালির বাঘ।