আরামবাগের ঐতিহাসিক মান্দারন পর্যটন কেন্দ্রে বড়দিনে পর্যটকদের ঢল

হুগলি জেলার আরামবাগের অন্যতম পযটন কেন্দ্র হল মান্দারন। দামোদর নদীর তীরে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে এই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠে।
কয়েক একক জমি ওপর গড়ে উঠেছে এই বনভূমি। প্রত্যেক বছরের মতো এই বছরও গোঘাটের মান্দারন পর্যটন কেন্দ্রে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষ্যে অসংখ্য পর্যটকের ভিড় হয়। তারা বনভোজনে মেতে ওঠেন। শেষ খবর পাওয়া পযন্ত কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এই বছর বনভোজন হয়। হুগলি জেলার মধ্যে অন্যতম সরকারি পার্ক হল মান্দারন। এই বছর এই পার্কে বনভোজনের করার জন্য বেশ কয়েকটি নিয়ম কানুন বলবৎ করে মান্দারন পার্ক কর্তৃপক্ষ। পার্কের সম্পূর্ণ ভাবে ডিজে বক্স বাজানো নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হয়।

ভ্রমণপিপাসু মানুষ এদিন সবুজের টানে এদিন মান্দারনে আসেন। চারিদিকে শুধু গাছ আর গাছ। সবুজের সমারোহ। নিস্তব্ধতা যেন এলাকা জুড়ে রয়েছে। তবে ২৫ ডিসেম্বর একটু আলাদা। বনভোজনের জন্য প্রতি বছরই বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষ মান্দারনে আসেন। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান অন্যান্য বছর ২৫ ডিসেম্বর ভোর থেকেই পার্কে লোকজন চলে আসে। বসে যায় বনভোজনের আসর। এই বছরও সেই দৃশ্য দেখা যায়। আঞ্চলিক ইতিহাসবিদদের মতে প্রায় ৯০০ খ্রিস্টাধে শূর বংশের সামন্ত রাজারা মান্দারন গড় তৈরি করেন। সুনিদিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক চারিদিকে পরিখা দিয়ে ঘেরা ছিল গড়টি। যাতে করে বাইরের শত্রু সহজে গড়ে প্রবেশ করতে না পারে। কয়েকশো জমির ওপর তৈরি করা হয়েছিল এই গড়টি। চারদিকে জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। একবার কেউ গড়ে প্রবেশ করলে সহজে যেমন বের হতে পারত না তেমনি বাইরে থেকে সহজে কেউ গড়ে প্রবেশ করতে পারত না। রাজ পরিবারের সদস্যরা বেশিভাগ সময় সুরঙ্গ দিয়ে যাতায়াত করত। বর্তমানেও চারিদিকে সবুজের সমারোহ। কিন্তু এই রকম এক ঐতিহাসিক জায়গা সংরক্ষণের অভাবে বেহাল হয়ে পড়ে ছিল। প্রাচীর ভেঙে পড়ে গিয়েছিল। পযটকদের জন্য তৈরি বসার জায়গা, বাথরুম, সংরক্ষিত প্রাণীদের জন্য লোহার খাঁচা সবই ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে ছিল। প্রশাসনিক উদাসীনতায় এই রকম এক মনোরম জায়গা ধীরে ধীরে নষ্ট হতে বসেছিল। ভয়ে পর্যটকরা আর মান্দারন যেতে চাইছিলেন না। কিন্তু বর্তমানে আবারও নতুন ভাবে সেজে উঠেছে মান্দারন। পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য ইতিহাসের পাতা ওল্টালে জানা যাবে এই গড় মান্দারন আক্রমণ করেছিল চোল বংশের রাজা রাজেন্দ্র চোল। এই বিষয়ে হুগলি জেলার আঞ্চলিক ইতিহাস বিদ দেবাশিস শেট জানান, চোল আমল থেকেই শূর বংশের পতন শুরু হয়। পরবর্তী কালে ইসমাইল গাজী এই মান্দারন গড় দখল করেন। কথিত আছে, তিনি নাকি ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তাকে ওই গড়েই সমাধিস্থ করা হয়। আর সেখানেই গড়ে ওঠে জাগ্রত বড় আস্তানা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × five =