নলহাটি থেকে সূত্র পেয়ে ডায়মন্ড হারবারে অভিযান, ধৃত আরও এক সন্দেহভাজন জঙ্গি

রামপুরহাট: জেএমবি (জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ) জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগ থাকার সন্দেহে রাজ্য এসটিএফ (স্পেশাল টাস্ক ফোর্স) ফের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল। ধৃতের নাম আবাসউদ্দিন মোল্লা। তার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার পাতরা গ্রামে।

সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বীরভূম জেলার নলহাটি এলাকা থেকে দুই সন্দেহভাজন জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে রাজ্য এসটিএফ। আজমল হোসেন (২৮) এবং সাহেব আলি খান (২৮)। আজমল বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা, অপরদিকে সাহেব আলি মুরারইয়ের বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। ওই তথ্যের ভিত্তিতেই উঠে আসে ডায়মন্ড হারবারের আবাসউদ্দিন মোল্লার নাম। তার পরেই তদন্তকারী দল পাতরা গ্রামে অভিযান চালায়। শুক্রবার রাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত আবাসউদ্দিনের সঙ্গে আগে ধৃত দুই জঙ্গির নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে সন্দেহ, সে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত থেকে নানা ধরনের গোপন কাজকর্মে যুক্ত ছিল। এই চক্রের আরও সদস্য ও পরিকল্পনার খোঁজে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এসটিএফ। তার মোবাইল ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শনিবার সকালে ধৃত আবাসউদ্দিন মোল্লাকে রামপুরহাট মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। এসটিএফ ধৃতের হেফাজতের আবেদন জানায়। আদালত 13 দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে।

রামপুরহাট আদালতের সরকারি আইন জীবি সৌকত হাতি জানান, রাজ্যে বাড়তে থাকা জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ বাড়ছে প্রশাসনের মধ্যে। এই ঘটনার পর নিরাপত্তা সংস্থাগুলি জেলাভিত্তিক নজরদারি আরও বাড়াতে চলেছে বলে জানা গেছে। তদন্তকারী সংস্থা সন্দেহ করছে, জেএমবি-র শাখা বাংলায় নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় প্রতিটি তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এসটিএফ।
গ্রেফতারের পর থেকেই আবাসউদ্দিনকে জেরা করছে এসটিএফ। তাঁরা জানতে চান, ঠিক কী ভূমিকা ছিল তার, কোথায় কোথায় যাতায়াত করত, কীভাবে জেএমবি-র সঙ্গে জুড়েছিল। এছাড়াও তার মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্রের খবর, এই তিন ধৃতের মধ্যে একটি সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গ ও বীরভূম জেলায় জেএমবি ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে গোয়েন্দা বিভাগ। অতীতেও রাজ্যে জেএমবি জঙ্গিদের সক্রিয়তার নজির রয়েছে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ তার অন্যতম উদাহরণ, যেখানে একাধিক বাংলাদেশি নাগরিক পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে থেকে জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত ছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ায় এবং কিছু কিছু এলাকায় আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা থাকার কারণে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলি রাজ্যকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেও জেএমবি সদস্যরা নতুন সদস্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চালাচ্ছে।
এদিকে সূত্রে জানা গেছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ (Unlawful Activities Prevention Act) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পাশাপাশি আইটি অ্যাক্ট এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারাও প্রয়োগ করা হয়েছে। আবাসউদ্দিনকে আদালতে পেশ করে পুলিশ 13 দিনের হেফাজতে নিয়েছে।
তদন্তকারীরা এখন চেষ্টা করছেন এই নেটওয়ার্কের অন্যান্য সদস্যদের খুঁজে বার করতে। কে কোথায় লুকিয়ে রয়েছে, কারা এই সংগঠনের লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছে, কারা অর্থ জোগাচ্ছে—তা জানতেই চলছে বিস্তৃত অনুসন্ধান। একটি গোটা সেল গঠিত হয়েছে, যারা শুধুমাত্র এই ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত থাকবেন।

জেলা পুলিশ প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে এসটিএফ। প্রয়োজনে এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি)-কেও তদন্তে যুক্ত করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। কারণ, এই ধরণের জঙ্গি কার্যকলাপ একমাত্র রাজ্যস্তরে আটকে থাকলে রোধ করা কঠিন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবার যে ভাবে জেএমবি সদস্যদের ধরা পড়ছে, তাতে স্পষ্ট যে তারা আবার রাজ্যে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এসটিএফের তৎপরতায় তাদের পরিকল্পনা অনেকটাই বানচাল হচ্ছে।

তদন্তে যদি উঠে আসে আরও কোনও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত, তবে তা দেশের নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হবে। আপাতত ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে চুলচেরা তদন্ত চালাচ্ছে এসটিএফ। এই গ্রেফতারির মাধ্যমে যে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসতে চলেছে, তা মনে করছেন গোয়েন্দারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 3 =