দামোদরের গতিপথ আটকে অস্থায়ী সেতু তৈরির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদন, পূর্ব বর্ধমান: প্রশাসনের কোনও দপ্তরের অনুমতি ছাড়াই দামোদরের এক পার থেকে আর এক পারে বালির গাড়ি চলাচলের জন্য কাঠের অস্থায়ী সেতু তৈরির অভিযোগ উঠল মেমারি ১ নম্বর ব্লকের দলুইবাজার ২ নম্বর পঞ্চায়েতের পাল্লা এলাকায় অসাধু বালি কারবারীদের বিরুদ্ধে।
ওই এলাকায় দামোদরের বুকে ৪ নম্বর ঘাটের কাছে জোরকদমে সেতু তৈরির কাজ চলছে বলে অভিযোগ। দলুইবাজার ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান চুমকি মণ্ডল এই অবৈধ সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধের জন্য মেমারি ১ নম্বর বিডিও, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিককে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন। মেমারি ১ নম্বর ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক বিশ্বজিৎ দাস জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই পাল্লা ৪নং ঘাটের অস্থায়ী সেতুর বিষয়টি পরিদর্শন করা হয়েছে। গতবছর এটির অনুমতি ছিল। কিন্তু এবার এখনও পর্যন্ত কোনও অনুমতি না থাকায় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজ বন্ধ আছে।
অন্যদিকে পঞ্চয়েত প্রধান চুমকি মণ্ডলের দাবি, পঞ্চায়েতের অনুমতি না নিয়েই কয়েকজন সেতু তৈরির কাজ করছিল। যেটা অনুমতি ছাড়া কেউই করতে পারে না। বেআইনি ভাবে সেতু তৈরি ও বালি খননের কাজ বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, যাতে তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের অনেকের অভিযোগ, বালি তোলার জন্য পাল্লা ৪নং ঘাটের বৈধতা শেষ হয়ে গিয়েছে। তারপরেও স্থানীয় কয়েকজন বালি কারবারি জোর করে অবৈধভাবে নদী থেকে বালি তুলছে। প্রতিদিন নদে নৌকা নামিয়ে বালি তুলে কয়েকশো ট্রাকটর বালি পাচার করে দিচ্ছে। এমনকি জামালপুরের বেড়ুগ্রাম অঞ্চলের ঘাটের চালান নিয়ে পাল্লা এলাকায় বেআইনি কারবার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের একাংশের আরও অভিযোগ, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করে কোনও অনুমতি না নিয়েই ওপার থেকে বালির গাড়ি এপার দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গত বছরের ব্রিজের পুরনো কাঠামোর ওপরেই নদীর বুকে অস্থায়ী ব্রিজ তৈরি করার কাজ করছে।
অথচ প্রতিবছর বর্ষার আগে নদীবক্ষ থেকে সমস্ত অস্থায়ী কাঠামো তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু পাল্লা ৪নং ঘাটের অস্থায়ী সেতুর নীচে থাকা শাল বল্লার কাঠামো যেমন ছিল তেমনই রয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথই বদলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, নদীর বুকে লাগানো গত বছরের পুরনো কাঠামোর ওপরেই এবছর ফের বিনা অনুমতিতে তৈরি করা হচ্ছিল সেতু।
স্থানীয় বালি ব্যবসায়ী গৌতম রায় এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, প্রতিবছরই তাঁদের সেতু নির্মাণের জন্য অনুমতি থাকে। এবছরও কাজ শুরু করা হয়েছে কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে এখনও অনুমতি পাওয়া যায়নি। অন্যান্য দপ্তরের কাছেও অনুমতি চেয়ে আবেদনপত্র জমা করা হয়েছে। সেতুর কাজ শেষ হওয়ার আগেই অনুমতি চলে আসবে।
যদিও গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এ যেন বিনা প্ল্যানে বাড়ি তৈরি করার পর অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুমতির আবেদন জানানোর মতো ব্যাপার। এখন দেখার বিষয়, মেমারি ১ নম্বর ব্লক প্রশাসন, ব্লক ভূমি দপ্তর ও পঞ্চায়েত এই অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেই দিকেই তাকিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − four =