বিপ্লব দাশ
লোকসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে অনীহা কংগ্রেস হাইকমান্ডের। তৃণমূল নেত্রীকে লাগাতার আক্রমণ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির। উপরন্তু ৭ মাস ধরে কংগ্রেসের জমিদারি মেজাজ! এই কারণেই ভেস্তে গিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। সোমবার নিজের সংসদীয় কেন্দ্র আমতলায় কার্যত সেকথাই বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডায়মন্ডহারবারে সম্পূর্ণ ও অসম্পূর্ণ মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার সাতশো আশি কোটির কাজ গত দশ বছরে করা হয়েছে বলে জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাকেই ‘ডায়মন্ডহারবার মডেল’ বলে উল্লেখ করেন সাংসদ। এদিন, আগামী দশ বছরে ডায়মন্ডহারে দশ হাজার কোটির উন্নয়নের কাজের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেন অভিষেক।
এদিন সাংবাদিকরা ইন্ডিয়া জোট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অভিষেক বলেন, ‘দলনেত্রী ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে বলেছেন, আমরা একাধিকবার কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করেছি। শেষ যে মিটিং হয়েছিল, তাতে কংগ্রেসকেও জানানো হয়েছিল, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিন। বারেবারে বলার পরেও হয়নি। আমরা বলছি, ইন্ডিয়া জোটকে সাপোর্ট করি। আসন সমঝোতা হয়নি। কার জন্য হয়নি সেটা মানুষ দেখুক। মানুষের উপর ছেড়ে দেওয়া হোক, মানুষ কোথায় কাকে জেতাবে, সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া আক্রমণের মুখে পড়েন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। শেষ সাত মাস ধরে অধীর চৌধুরী তৃণমূল সরকারকে একাধিকবার আক্রমণ করেছেন বলে দাবি তাঁর। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘হিম্মত থাকলে’ বহরমপুরে এসে লড়ে দেখান। অধীর চৌধুরীর এই বক্তব্যের কড়া নিন্দা করে অভিষেক বলেন, ‘ধৈর্য্যের সীমা থাকে। যে মহিলা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে, তাঁকে বলছে আমার বিরুদ্ধে লড়ুন। কে বলছেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।’ এরপরই তাঁর কংগ্রেস হাইকমান্ডকে উদ্দেশ্য করে অভিষেক বলেন, ‘সাত মাসের মধ্যে কংগ্রেস বলতে পরবে, আমরা কথা বলতে যায়নি। অথচ কংগ্রেস প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেসের নেতৃত্ব রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন দাবি করছে। মানুষ আজকে বুঝতে পারছে, বিজেপির বি-টিম কে? গত সাত মাস কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্বকে কতবার বিজেপিকে আক্রমণ করেছে। বাংলা একশো দিনের টাকা পাচ্ছে না, কটা সাংবাদিক বৈঠক করেছে। অধীর চৌধুরী কতবার এই নিয়ে কথা বলেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, আদতে বিজেপির লাভের কথা বলছে।’
এদিন সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেশখালির ঘটনার ২৪ দিন পরে মুখ খুলেও কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে তোপ দাগলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘সন্দেশখালিতে যা হয়েছে, তা না হলেই ভালো হত।’ তিনি যে বিষয়টি একেবারেই ভালোভাবে নিচ্ছেন না, তা স্পষ্ট করেন। এরপর কেন্দ্রীয় এজেন্সির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কোনও বিজেপি নেতার ইডি-সিবিআই পদক্ষেপ করতে সাহস পায় না। এমনকী, জেল থেকে বেরিয়ে বিজেপিতে গেলেই সাধু হয়ে যায়।’
এদিন বিষ্ণুপুরের আমতলায় একটি অডিটোরিয়ামের উদ্বোধন করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর একটি প্রশাসনিক বৈঠক করেন। যেখানে হাজির ছিলেন বিধানসভা, পঞ্চায়েত, পুরসভার জনপ্রতিনিধি সহ সমস্ত প্রসাশনিক আধিকারিকরা। বৈঠকে গত গত ১০ বছরে কি কাজ হয়েছে, আর কি কাজ বাকি আছে তা নিয়েই আলোচনা হয়।