নিজস্ব প্রতিবেদন, পুরুলিয়া: দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর পর অবসর গ্রহণ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর। চোখের জলে বিদায় জানালেন গ্রামবাসী থেকে জনপ্রতিনিধি প্রত্যেকে। এমনই চিত্র দেখা গেল পুঞ্চা ব্লকের নপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বুগলিডি গ্রামের ৬০ নং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে।
শনিবার সেন্টারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সুনীতি মাহাতকে নিয়ে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন গ্রামবাসীরা। এই দিন অতি পরিচিত সকলের কাছের মানুষ বুগলিডি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী সুনিতি দিদির বিদায় অনুষ্ঠানে শিশু থেকে প্রসূতি মহিলার চোখের জলে বিদায় অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল। প্রসূতি মা ঝুমা কর্মকার,অনিমা সহিসদের কথায়, দিদিমণি আর সেন্টারে আসবেন না শুনেই খারাপ লাগছে। জল ঝড় কোনও দিন বাদ দেননি, প্রতিদিন সেন্টারে এসে শিশুদের পঠনপাঠন থেকে সকল প্রসূতির খবর রাখতেন। শুধু সেন্টারের কর্মী ছিলেন না, ঘরের মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালে ৩রা মার্চ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সুনীতি দেবী। প্রত্যন্ত গ্রামের গৃহবধূ সুনীতি মাহাতর কর্মজীবনে একসময় সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অর্থাভাব। বেতন কম, স্বামী বেরোজগারে রাজনৈতিক নেতা, নিজের শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও সংসার প্রতিপালন সহ দুঃখ-কষ্টে ভরা তবু নিজের সংসারে সময় দেওয়ার পাশাপাশি অন্যদের আগলে রেখে সরকারি পরিষেবা পাইয়ে দিতে ব্যস্ত থাকতেন এই দিদিমণি। শনিবার বুগলিডি গ্রামে বিদায় সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত ছিলেন পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনিল বরণ সহিস, নপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য আনন্দ কর্মকার সহ অন্যান্য সেন্টারের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সহায়িকা থেকে গ্রামবাসীবৃন্দ।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনিল বরণ সহিস বলেন, ‘শুধু অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসাবে নন, সকলের কাছের মানুষ তিনি। আমাদের প্রত্যন্ত গ্রামের শিশুদের হাতেখড়ির পাঠ এই দিদিমণির মধ্য দিয়েই হয়েছে এবং তাঁর হাত ধরেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সমস্ত পরিষেবা বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে। দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর সময়কাল অতিবাহিত করেছেন এই সেন্টারে, তাঁর কাছে আমরা সকলেই ঋণী।’