বাল্যবিবাহ রুখতে বহুরুপী সেজে প্রচারে নামলেন খানাকুলের শিক্ষক

মহেশ্বর চক্রবর্তী

সমাজ সংস্কার অথবা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পীঠস্থান হল হুগলি জেলার মধ্যে অন্যতম খানাকুল। এই খানাকুলেই জন্মেছিলেন সমাজ সংস্কারক তথা ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়। আর সেই রামমোহনের পদধূলিধন্য খানাকুলের এক শিক্ষক বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে বহুরূপী সেজে গ্রামে গ্রামে পথনাটিকার মাধ্যমে ছড়ায়-গানে এলাকার মানুষকে সচেতন করে চলেছেন। খানাকুলের বিভিন্ন জায়গায় বহুরূপী সেজে এই শিক্ষক বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করে চলেছেন। পাশাপাশি মহকুমা ও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেরান বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে। খানাকুলের মাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস মুখার্জি বহুরূপী সেজে গ্রামের মানুষদেরকে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে সচেতন করেন। বাল্য বিবাহের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে জানান তিনি। দেবাশিসবাবু নিজেকে সকলের কাছে বহুরূপী ‘গোলাপসুন্দরী’ নামে পরিচয় করান। পরনে বিভিন্ন রংয়ের জোড়াতালি দেওয়া পোশাক পরে নিজেকে এক বহুরূপীর মতো তৈরি করেছেন। গালে-কপালে রঙ, হাতে বালা, পায়ে নূপুর। আর থালা বাজিয়ে নেচে নেচে গান গেয়ে গেয়ে নাবালিকার বিয়ে দিলে কি কি সমস্যা হতে পারে তা তুলে ধরেন। তিনি রীতিমতো ছড়া কেটে বলেন, ‘আঠারো বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেবে না/ বাবা-মা হয়ে তাদের বিপদে ফেলবে না/ অল্প বয়সে বিয়ে দিলে মেয়ে পড়বে রোগে/ তোমাদেরই কষ্ট হবে মেয়ে যদি ভোগে।’ গ্রামবাসীরাও তার এই সব কথা বেশ উপভোগ করেন। দেবাশিসবাবু অর্থাৎ বহুরূপী গোলাপসুন্দরী যখন বলেন ‘মেয়েদের ভালো করে লেখাপড়া শেখাও/ লেখাপড়া শিখিয়ে তাদের দেশ গঠনে লাগাও’ তখন গ্রামবাসীদের হাততালি দেখে অভিভূত বহুরূপী প্রধান শিক্ষক নিজেও। গ্রামবাসীরা যে তাঁর এইসব কথা ভালোভাবে গ্রহণ করেন তা উপলব্ধি করেই তাঁর এই কাজ অনেকটা সার্থক বলে জানান তিনি। দেবাশিসবাবু বলেন, আগের থেকে এখন বাল্যবিবাহ অনেকটা কমে গেলেও এখনও গ্রামেগঞ্জে আঠারো বছরের কম বয়সের মেয়েদের বিয়ে দেওয়া চলছে। আর এ ব্যাপারে সকলের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতেই আমার এই উদ্যোগ। তিনি বলেন, শিক্ষক হলেন সমাজ গড়ার কারিগর। ভালো-মন্দ নিয়ে সমাজকে সচেতন করাই আমাদের কাজ। শুধু তো ক্লাসে লেখাপড়া শেখানোতেই আমাদের দায়িত্ব শেষ নয়। এর বাইরেও আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমি তাই দেখলাম এই ছুটির সময়ে বহুরূপী সেজে যদি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সাধারণ মানুষকে বোঝানো যায় তাহলে এই সমাজ উপকৃত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × one =