‘নিজ ভূমে পরবাসী’, এমনই মানসিকতার সঙ্গে দিন কাটান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা

মালদা: কখনো শেয়াল ঢুকছে ঘরে, আবার কখনো জীবন বাঁচাতে তাড়ানো হচ্ছে বিষধর সাপ ও পোকামাকড়। এইভাবেই বছরের পর বছর বেঁচে রয়েছেন মালদার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে থাকা বাসিন্দারা। এককথায় বলা যেতে পারে ‘নিজ ভূমে পরবাসী’। আর ভোট আসলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে মনে পড়ে যায় সীমান্ত পারের কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে থাকা মানুষদের কথা। এতটাই অসহায় যে তাদের জন্য এলাকার কংগ্রেস সাংসদ থেকে কোনো সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। আর সন্ধ্যা ছয়টা বাজতেই কাঁটাতারের বেড়া ওপারে যে যেখানেই থাকুক না কেন, তাদেরকে যথাস্থানে চলে যেতে হয়। এটাই নাকি বিএসএফের নির্দেশ। রাতে কেউ অসুস্থ হলে নেই কোনও চিকিৎসা ব্যবস্থা। এমনকী পানীয় জল নিতে গেলেও কয়েক কিলোমিটার এপারে আসতে হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের।

বৃহস্পতিবার কালিয়াচক থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মহব্বতপুর, হাদিনগর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন দক্ষিণ মালদার বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। এলাকার মানুষের অভাব অভিযোগের কথা শুনে এবং অসহায়তা দেখে তিনি আর ভোট চাইতে পারেননি। বরঞ্চ কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে থাকা অনেক বাসিন্দারাই বলেছেন, কেন্দ্র সরকার তাদের জন্য কিছুই করেনি। কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে মূল সীমান্তে ভর্তি গ্রামে তাদের থাকার যে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন রয়েছে, সে নিয়েও ভাবনা নেই কেন্দ্রের। তার বাইরে বিদ্যুৎ, পানীয় জল, চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিক্ষা কেন্দ্র কোনো কিছুই নেই। অথচ নির্বাচন আসলেই একবার অন্তত ভোট রাজনীতি করতে দেখা যায় বিভিন্ন দলের নেতাদের।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কালিয়াচক এবং বৈষ্ণবনগর থানার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে ভারত – বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতার। আর কাঁটাতারে ওপারে বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আজও নিজ ভূমিতে পরবাসী হয়ে রয়েছেন। স্বাধীন ভারতের নাগরিক হয়েও দুই দেশের সীমান্ত কাঁটাতার প্রায় ৩০০টি পরিবারকে পরাধীন করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। কার্যত বন্দি জীবনযাপন করছেন সীমান্ত কাঁটাতারের ওপারে প্রায় ৩০০টি পরিবার।

হাদিনগর গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা বিবি বলেন, এই গ্রামে একসময় বসবাস করতেন প্রায় এক হাজারের বেশি পরিবার। কিন্তু সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়ার পর আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল পরিবার এপারে চলে এসেছেন। কিন্তু আজও আর্থিক ভাবে দুর্বল প্রায় ৩০০টি পরিবার রয়ে গেছেন কাঁটাতারের ওপারে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিয়মমতো খোলা হয় সীমান্তের দরজা। আর বন্ধও হয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিয়মে। দিনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই এলাকার বসবাসকারীদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহ রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করতে হয়। সেই সময়ে বাড়িতে খাওয়ার জলটুকুও নিতে হয়।

বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী বলেন, এ জন্য দায়ী এলাকার কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। তারা ভোটে জিতে এলাকার খবর রাখেননি তিনি। তাই আজকের দিনে এমন করুণ পরিস্থিতে বসবাসকারী বাসিন্দারা রয়েছেন। শুধু তাই নয়, তৃণমূল কংগ্রেসকেও একই ভাবে কাঠগড়ায় তুলেছেন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। তাঁর দাবি, এলাকার সাংসদ ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে সমস্যা সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা নীরবেই থেকেছেন।

জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি অর্জুন হালদার বলেন, যিনি অভিযোগ করছেন তাকে আগে নিজের মুখ আয়নায় দেখতে উচিত। তিনি তো ইংরেবাজারের বিধায়ক। বিধানসভা নির্বাচন তিন বছর পার হয়েছে, এর মধ্যে উনি কি কাজ করেছেন। তিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগটুকু রাখেননি। ভোটের জন্য এখন উল্টোপাল্টা বলছেন। রাজ্য তৃণমুল কংগ্রেসের সহ সভাপতি কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, বিজেপি প্রার্থী ইংরেজবাজারের বিধায়ক হয়ে এতদিন কি কাজ করেছেন। এর জবাব উনি দিতে পারবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 2 =