আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
একদিকে উন্নয়নের রামধনু, অন্যদিকে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস ও উপভোক্তাদের সামগ্রী প্রদান করে জেলার বিভিন্ন প্রকল্পে উন্নয়নের জন্য ৭১১ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে বাংলা ভিখারি নয়, বাংলা হাত পাতে না, বাংলা হক চাহে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভা নির্বাচনের আগে পুরুলিয়া সফরে এসে এভাবেই যৌথ মোড়কে নিজেকে পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। পাশাপাশি, আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর করা যাবে না বলে আইন করে দেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী যেমন জানান, তেমনই কুড়মি জনজাতিদের জন্য সার্ভে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও এদিন ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আদিবাসী ও কুড়মি জনজাতিদের পাশে থাকার বার্তা দেন এদিন মুখ্যমন্ত্রী।
মাও অধ্যুষিত জঙ্গলমহল পুরুলিয়াতে মমতা ম্যাজিক এখনো অটুট রয়েছে যে তা তিনি এদিন বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন। বিজেপির দুর্গ বলে পরিচিত পুরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা ভাসল জনজোয়ারে। মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে শিমুলিয়া ব্যাটারি গ্রাউন্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক সভায় ১০ থেকে ১৫কিলোমিটার দূরের গ্রামগুলো থেকে পায়ে হেঁটে মানুষ এসেছিলেন। কেন? কীসের টানে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত, রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী-সহ একাধিক জনমুখী সুযোগসুবিধা গুলি পেয়ে মানুষজন যে উপকৃত সেই বার্তা দিতেই পুরুলিয়ার মানুষের ভিড় উপচে পড়ে সভাস্থলে।
মঙ্গলবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আকাশ পথে দুপুর ১টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী সভামঞ্চে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। ১টা ৩০থেকে ২টো ২০পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে বক্তব্য রাখেন। এদিন তিনি সরকারী পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান মঞ্চে ২৮১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩৬২ টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যসচিব ও রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তাদের পাশে দাঁড় করিয়ে। এছাড়াও বেশ কিছু উপভোক্তাদের হাতে বিভিন্ন সামগ্রি ও প্রশংসা পত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী সরকারী পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের ও বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, ‘লোকসভা নির্বাচনেও এই পুরুলিয়া লোকসভাতে বিজেপি জয়লাভ করে। ভোটে জেতার পর আর এমপি, এমএলএ- দের দেখা মিলে না। জেতার পর জনপ্রতিনিধিদের দেখা নেই। ভোটে জেতার পর থেকে এলাকায় আসেন না তারা। এখন মানুষ বুঝতে পারছেন। আমাদের সরকার সবসময় মানুষের পাশে আছে। স্বাস্থ্যস্বাথী, কন্যাশ্রী,লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিধবা ভাতা, কৃষক বন্ধু-সহ একাধিক প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এই পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ৭২হাজার কোটি টাকার শিল্প গড়ে উঠবে। হাজার হাজার ছেলে মেয়েদের চাকরি হবে।’ এদিন প্রশাসনিক সভামঞ্চ থেকেই ভার্চুয়ালি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে জঙ্গল সুন্দরী কর্মনগরী প্রকল্পে শ্যাম স্টিল শিল্প গোষ্ঠীর নতুন কারখানার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। শ্যাম স্টিলের এই কারখানা পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১নম্বর ব্লকের অন্তর্গত লছমণপুর গ্রামের কাছে ৬০০একর জমির উপর গত এক বছর আগে এই কারখানার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। ১৫০০কোটি টাকা লগ্নি করে এই স্টিল কারখানা গড়ে উঠেছে এমনটাই জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামীদিনে পুরুলিয়া অন্য জেলাকে চাকরি দেবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলার টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। একশো দিনের বকেয়া টাকা মেটাচ্ছে রাজ্য। ১এপ্রিলের মধ্যে টাকা না পেলে আবাসের টাকাও দেবে রাজ্য।’ লোকসভা নির্বাচনের আগে পুরুলিয়া সফরে এসে এই ভাবেই নিজেকে পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এদিন পুরুলিয়ার শিমূলিয়া প্রশাসনিক জনসভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, মন্ত্রী সন্ধ্যারাণী টুডু, মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত, রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা, পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা, জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাত, প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাত, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের-সহ সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যান্যরা।