নিজস্ব প্রতিবেদন, কাঁকসা: শুক্রবার ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে মুড়ে থাকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। তার মধ্যে কাঁকসা ব্লকে সকাল থেকেই কুয়াশার জেরে গাড়ির লাইট জ্বালিয়েই চলাচল করছিল যানবাহন। রাস্তায় দুর্ঘটনা এড়াতে কাঁকসার প্রতিটি মোড়ে কড়া নজরদারিতে মোতায়েন ছিলেন কাঁকসা ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ কর্মীরা ও কাঁকসা থানার পুলিশ। পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারে তার দিকে নজর ছিল পুলিশের।
ঘন কুয়াশার মধ্যেই সকাল সকাল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় এগিয়ে সকাল দশটায় করা হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হয় বেলা একটায়। এদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। ৯ টা ৪৫ মিনিটে প্রশ্ন পত্র দেওয়া হয়। এবছর পশ্চিম বর্ধমান জেলায় গত বছরের তুলনায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজারের মতো পরীক্ষার্থী বেড়েছে এবার।
গত বছর পরীক্ষা দিয়েছিল ২২ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী। এবার পরীক্ষা দিচ্ছে ২৮ হাজারের বেশি। মোট পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছে ৮৫ টি। এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রুখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ফাঁস রুখতে বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এই বছর প্রথম প্রশ্নপত্রের প্রত্যেকটি পাতায় ক্রমিক নম্বরের কোড থাকবে। কোনও পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্রের ছবি তুললে সেই ছবি দেখেই বোঝা যাবে ছবিটি কে তুলেছে। পরে সেই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা পুরোপুরি বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে কোনও পরীক্ষার্থীর জলের বোতল, বই, নোটবুক, খাতা, মোবাইল, ক্যালকুলেটর, স্মার্ট ঘড়ি, পেনড্রাইভ সহ ইলেকট্রনিক কোনও দ্রব্য নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না এমনই নির্দেশিকা জারি রয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে। পরীক্ষা চলাকালীন বাইরের কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। রয়েছে কড়া পুলিশ ব্যবস্থা।
এদিকে এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় এগিয়ে নিয়ে আসায় বেজায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। বিদ্যাসাগরের পদধূলি ধন্য গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েছে পরীক্ষা কেন্দ্র। এই বিদ্যালয়ে পাঁচটি ßুñলের পরীক্ষাকেন্দ্র হয়েছে। অভিভাবকেরা বেজায় ক্ষুব্ধ সময় এগিয়ে নিয়ে আসার কারণে। মলানদিঘি থেকে আসা এক অভিভাবিকার দাবি, সময় এগিয়ে আনায় তা¥দের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। দূর থেকে আসার জন্য খুব ভোরে উঠতে হয়েছে। ছেলেমেয়েরা নার্ভাস থাকার জন্য সমস্যা হচ্ছে এত দ্রুত প্রস্তুতি নিতে। বিরুডিহা থেকে আসা অভিভাবকের দাবি, খুব সকালে নার্ভাস থাকার জন্য কিছু খেয়ে আসছে না ছেলেমেয়েরা। অভিভাবকদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বেলা ১২ টায় পরীক্ষা শুরুর সময়টাই ঠিক ছিল, সময় এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য চরম সমস্যায় পড়ছেন দূরের অবিভাবকরা আর পরীক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে কাঁকসার দু’টি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে বিদ্যালয়ের সামনে হাজির হন কাঁকসা থানার পুলিশ ও কাঁকসা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান সহ পঞ্চায়েতের সদস্যরা। এদিন কাঁকসা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দিয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানান কাঁকসা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য লাল্টু চট্টোপাধ্যায় ও কাঁকসা থানার এক পুলিশ আধিকারিক।
অন্যদিকে পানাগড় বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীদের হাতে গোলাপফুল ও একটি করে কলম তুলে দিয়ে তাদের উৎসাহ দেন কাঁকসা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুমনা সাহা, উপপ্রধান উজ্জ্বল মল্লিক সহ পঞ্চায়েতের সদস্যরা ও কাঁকসা থানার পুলিশ আধিকারিকরা। পাশাপাশি এদিন কাঁকসা গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয় যেখানে পঞ্চায়েতের কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন এবং পরীক্ষার্থীদের যে কোনও সমস্যায় তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপপ্রধান উজ্জ্বল মল্লিক।
এদিন পরীক্ষার শেষে হাসিমুখেই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের হতে দেখা যায়।প রীক্ষার্থীরা জানিয়েছে, প্রশ্নপত্র সহজ হয়েছে, তবে সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে পরীক্ষার হলে ঢুকতে হয়েছে তাই অনেকেই একটু নার্ভাস ছিল।