বন্ধুত্বে হোক বা খেলা, কথা বলা খুব প্রয়োজন। ইস্টবেঙ্গল প্লেয়াররা খুব ভালো যেন উপলব্ধি করতে পেরেছেন। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ইস্টবেঙ্গল সম্পর্কে লিখতে হত, প্লেয়ারদের বোধ মাঝে মধ্যেই গেটটুগেদার প্রয়োজন। যাতে তাঁরা নিজেদের মধ্যে ভালো ভাবে পরিচয় সেরে নিতে পারেন! এই ইস্টবেঙ্গল পুরোপুরি আলাদা। মাঠে সকলেই সকলের সঙ্গে কথা বলছেন। নিজেদের ভূমিকা পালন করেই ক্ষান্ত নন। সতীর্থদেরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সেই মুহূর্তে তাঁর কী করতে হবে। কার্লেস কুয়াদ্রাতের এই কথা বলা প্লেয়ার ট্রফির স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মরসুমের শুরুতে ডুরান্ডের ফাইনালে উঠলেও ট্রফি আসেনি। আরও একটা ট্রফির সুযোগ লাল-হলুদে। জামশেদপুর এফসিকে হারিয়ে কলিঙ্গ সুপার কাপের ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল।
ম্যাচের শুরুর দিকে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়। আগের দিন খালিদ জামিল বলেছিলেন, সকলেই খেলার মতো জায়গায় রয়েছেন। প্রতিপক্ষ শিবিরে চাপ তৈরি করতেই কি এড়িয়ে গিয়েছিলেন? কার্ড সমস্য়ায় ইস্টবেঙ্গলে ছিলেন বোরহা। শুরু থেকেই খেলার সুযোগ পান তরুণ ফুটবলার বিষ্ণু। অন্য দিকে, কার্ড সমস্যায় ড্যানিয়েল চিমাকে পায়নি জামশেদপুর। তাতে অবশ্য আক্রমণ ভাগে সমস্যা ছিল না খালিদ জামিলের। যদিও ইস্টবেঙ্গলের এই রক্ষণ ভাগে চাপ তৈরি করা কঠিন। অন্তত এই ম্যাচে তাই দেখা গেল।
ডার্বি জিতে সেমিফাইনালে এসেছিল ইস্টবেঙ্গল। ভয় ছিল আত্মতুষ্টির। মাঠে তা ধরা পড়ল না। ডার্বি জিতেই যে কাজ শেষ হয়ে যায়নি, ইস্টবেঙ্গল প্লেয়াররা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ১৯ মিনিটেই এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। দুর্দান্ত বোঝাপড়ার সুফল। কর্নার থেকে তৈরি মুভ। সাউল ক্রেসপোর অনবদ্য পাস। ওয়ান টাচে গোল করতে ভুল করেননি হিজাজি। ইস্টবেঙ্গলের এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার গোল করছেন, নতুন দৃশ্য নয়।
এগিয়ে থেকে বিরতিতে গেলেও ১ গোল কখনও সুরক্ষিত নয়। মনে করিয়ে দিতে হয়নি ইস্টবেঙ্গল আক্রমণ ভাগকেও। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই অনবদ্য মুভ। নীশু কুমার ওভারল্যাপে উঠে বল সাজিয়ে দেন সিভেরিওকে। ২-০ এগিয়ে দেন সিভেরিও। ইস্টবেঙ্গলের তরুণ ফুটবলা সায়ন ব্যানার্জি মাঠে নেমেই ইমপ্যাক্ট ফেলেন। তাঁকে আটকাতে হিমশিম জামশেদপুর এফসির অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার প্রতীক চৌধুরি। সায়নের সৌজন্যে পেনাল্টি পায় ইস্টবেঙ্গল। ৩-০ যেন সময়ের অপেক্ষা। জোরালো স্পট কিক ক্যাপ্টেন ক্লেটন সিলভার। যদিও ক্রসবারে লাগে। পেনাল্টি থেকে ৩-০ হয়নি।
ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাদের একটা খুব চেনা ছবি, তিনি দাবা খেলছেন। ইস্টবেঙ্গলের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে লেখা হয় ‘প্রফেসরও’। খালিদ জামিলের জামশেদপুর এফসির বিরুদ্ধে প্রতিটা মুহূর্ত, চাল যেন হিসেব করে রেখেছিলেন। আর মাঝ মাঠ থেকে তাঁর কাজ অপারেট করলেন সৌভিক চক্রবর্তী। ট্রফির লক্ষ্যে, রইল বাকি একটা জয়।